নিজস্ব প্রতিবেদনঃ সম্প্রতি বর্ধমানে মদ খেয়ে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় অবশেষে গ্রেফতার করা হল মূল অভিযুক্তকে। ঘটনার ৬ দিনের মাথায় মঙ্গলবার সকালেই মূল অভিযুক্ত হোটেল মালিক গণেশ পাসওয়ানকে গ্রেফতার করল বর্ধমান থানার পুলিশ।
উল্লেখ্য, বর্ধমান কলেজ মোড় এলাকায় যে হোটেলের মদ খেয়ে সকলে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, এবং সেই সঙ্গে কয়েকজনের মৃত্যুও হয় বলে অভিযোগ, সেই তারা মা নামক হোটেলেরই মালিক হলেন গণেশ পাসওয়ান। ধৃত গণেশের বিরুদ্ধে ৩০২, ৩১৮, ২৭২,১২০ (বি) ধারায় মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে খুন, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও বিষক্রিয়াজনিত ধারা। জানা গিয়েছে, এদিন দুপুরেই ধৃতকে বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, বর্ধমান কলেজ মোড় এলাকায় তারা মা নামক হোটেলে মদ খেয়েই একসঙ্গে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর থেকে গত কয়েকদিনে মত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই হোটেলে মদ খেয়েই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলেই অভিযোগ। যদিও মদেই সকলের মৃত্যু হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে পুলিশ এখনও কিছু নিশ্চিত করেনি। তবে, হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, এই ঘটনায় গোটা বর্ধমান শহর জুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে জেলা খাদ্য সুরক্ষা দফতর। সোমবারই খাদ্য সুরক্ষা দফতরের ২ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল ওই হোটেল ঘুরে দেখেন। পাশাপাশি আবগারি দফতরের পক্ষ থেকেও শুরু হয়েছে তদন্ত।
এই ঘটনায় ৮ জনের মৃত্যু পরেও প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেলেও এখনও কেন কেউ গ্রেফতার হল না, তা নিয়েই সরব হয়েছিল জেলার রাজনৈতিক মহল। সোমবারই অভিযুক্তের গ্রেফতারির দাবিতে পথে নামে বর্ধমান জেলা কংগ্রেস। সোমবার যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা মদের বোতল ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। এরপর এদিনই গ্রেফতার করা হয় তারা মা হোটেলের মালিককে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা প্রথমে প্রকাশ্যে আসে গত বৃহস্পতিবার রাতে। বর্ধমান শহরের বাহির সর্বমঙ্গলা পাড়ার পাঁচজন যুবক একসঙ্গে অসুস্থ হয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। তাঁদের মধ্যে প্রথমে শেখ সুবরতি ও শেখ হালিম নামে দুই ব্যক্তি মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর সামনে আসে। এই দুজনের মধ্যে শেখ সুবরতিকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর শেখ হালিমের চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয়। তারপর একের পর এক মৃত্যুর খবর আসতে থাকে।
শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত, মোট ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এঁরা সকলেই কলেজ মোড় এলাকায় ওই হোটেল থেকে বৃহস্পতিবার মদ খেয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় একের পর এক মৃতের সংখ্যা বাড়তেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। বেআইনি মদের কারবার রুখতে অভিযান শুরু করে পুলিশ। গত শনিবারই পুলিশ অনেকেই গ্রেফতার করে। সেই সঙ্গে বেআইনি বহু দেশি ও বিদেশি মদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তবে, মদে বিষক্রিয়ার দাবি উড়িয়ে দিয়েছে আবগারি দফতর। য়াবগারি দফতরের দাবি, মদের নমুনায় পরীক্ষাগারে কোনও অসঙ্গতি পাওয়া যায়নি। সরকারি লেভেল লাগানো মদ পাওয়া গিয়েছে। তাহলে কি হোটেলের সরকারি লেভেল লাগানো মদ খেয়েই মৃত্যু হচ্ছে? এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :