নিজস্ব প্রতিনিধি, নদিয়াঃ আজ থেকে শুরু হল ছাত্রজীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক। করোনা আতঙ্ক কাটিয়ে এবার অফলাইনেই হচ্ছে পরীক্ষা। করোনা আবহে ২০২০ সালের পর এবার অফলাইনে মাধ্যমিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ ছিল প্রথম পরীক্ষা।
এবারের ১১ লক্ষেরও বেশি পরিক্ষার্থীর মধ্যেই একজন নদিয়ার মুরুটিয়ার রানিমা খাতুন। সেও এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা বসছে দুচোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু এই ষোড়শীর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার পথটা খুব একটা মসৃণ ছিল না। প্রথমে তো বাবার বাড়ির তীব্র ইচ্ছেকে অগ্রাহ্য করে নিজের বিয়েটাকে আটকাতে পারেনি সে, যে বয়সে খেলাধুলা আর মন দিয়ে পড়ার কথা সেই বয়সেই তার অপোক্ত কাঁধে চাপে সংসারে দায়িত্ব আর হাতে ওঠে হাতা-খুন্তি। সদ্য কৈশোরে পা রাখা রানিমা সেদিন বুঝতেই পারেনি বিয়ে শব্দটার অর্থ। কিন্তু টাকে সবটাই মেনে নিতে হয়েছিল।
কিন্তু সে দমে যায়নি। ভিতরে ভিতরে প্রস্তুত হচ্ছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের পরীক্ষায় বসার কথা বলতেই, তাঁদের থেকে উত্তর আসে `না`। স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের পক্ষ থেকে বাধা পেলেও সে ভেঙে পড়েনি। সব বাধা অতিক্রম করে সে আজ পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছায়, পুলিশের সাহায্য নিয়েই। এমন ঘটনা ঘটেছে নদিয়ার তেহট্টের মুরুটিয়ায়।
কিশোরীর নাম রানিমা খাতুন। তার বাড়ি মুরুটিয়ায়। তার বিয়ে হয়েছে ওই এলাকারই যুবক সাহারুল শেখের সঙ্গে। রানিমা এবারের মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থী। কিন্তু সোমবার পরীক্ষা শুরুর দিনেই বিপত্তি ঘটে। বিয়ের পরও পড়াশোনা ছেড়েছিল না সে, তাই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছিল সে। কিন্তু সোমবার পরীক্ষা শুরুর আগেই সমস্যার শুরু।
রানিমার অভিযোগ, সে যখন স্কুল পোশাক পড়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের উদ্দেশে যাবে বলে বেরচ্ছিল, সেই সময়ই তাকে বাধা দেয় তার স্বামী এবং শ্বশুর নজরুল শেখ। রানিমা খাতুন জানিয়েছে, লকডাউন পরিস্থিতিতে তাকে স্কুলে যেতে হয়নি। কাজেই শ্বশুরবাড়ির লোকজনও টের পায়নি যে, সে এবার মাধ্যমিক দেবে। এদিকে, স্ত্রীর মাধ্যমিক পরীক্ষার কথা জানতে পেরেই স্বামী জানা যে, `বাড়ির বৌ সংসার করবে। পরিবারের বউয়ের পড়াশোনার কোনও দরকার নেই।`
কিন্তু, বাধা পেয়েও ভয় পায়নি মুরুটিয়া হাই স্কুলের ছাত্রী রানিমা। পুরো বিষয়টি হোয়াটস্অ্যাপে মেসেজ করে মুরুটিয়া থানা এবং নদিয়া জেলা পরিষদের সদস্য টিনা ভৌমিক সাহাকে জানায় রানিমা।
অন্যদিকে, রানিমার অভিযোগ পেয়ে তৎপর হয় প্রশাসনও। তাঁদের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানো হয় স্কুল পরিদর্শক, পরীক্ষাকেন্দ্রের ইনচার্জ এবং রানিমার স্কুলের প্রধানশিক্ষককে। এরপরই রানিমাকে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে গুয়াবাড়ি হাই স্কুলে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেয় মুরুটিয়া থানার পুলিশ। রানিমা জানিয়েছে, `আমি বিয়েও করতে চাইনি। আমি চাই না সংসার করতে। পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হতে চাই।`
আপনার মতামত লিখুন :