পশু-পাখি ভালোবাসেন না, এমন মানুষের সংখ্যা হয়তো হাতে গোণা। কিন্তু পশু-পাখিদের নিয়মিত রান্না করে খাবার খাওয়ান এমন খুব বেশি জনের দেখা হয়তো মিলবে না। তবে এমনই একজন হলেন মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরের বাসিন্দা বাণী রায়। পশু-পাখিদের ভিড়ে তাঁর বাড়ি কার্যত ছোট্ট চিড়িয়াখানা। নিজের হাতে তাদের সেবা সুশ্রুষাও করেন। নিজে যা খান তাই খাওয়ান পশু-পাখিদের, এমনকি নিজের হাতে রান্না করে খাইয়েও দেন। পশুপ্রেমের এমন অনন্য নিদর্শন সচরাচর চোখে পড়ে না!
স্বামী মনি মোহন রায় ছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালের ক্লার্ক। বেশ কয়েক বছর হল তিনি মারা গিয়েছেন। দুই মেয়ের এক জন বিবাহিত এবং অন্যজন কলকাতায় পড়ে। স্বামীও ছিলেন পশুপ্রেমী। স্বামীর মৃত্যুর পরেও অক্ষত স্ত্রীর পশুপ্রেম। স্বামী মারা গেলেও নিয়মিত পশু পাখিদের খাওয়াচ্ছেন বাণী দেবী। পশু, পাখিরাও দিব্যি তার হাতে খাচ্ছে।
আদতে কোচবিহারের বাসিন্দা বাণী রায়ের বাবা রবীন্দ্রনাথ রায় ১৯৭৭ সালে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার ওসি ছিলেন। সেই সূত্রে উনি হরিশচন্দ্রপুরেই বড়ো হয়েছেন। বাণী দেবী হরিশ্চন্দ্রপুর কিরণবালা বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। পশু পাখিদের খাওয়ানোর জন্য প্রত্যেক দিন তিনি নিজের হাতে রান্না করেন এবং নিজের হাতে খাইয়ে দেন। পাড়ার কুকুর-বিড়াল থেকে শুরু করে কাক-শালিক এরাই এখন বাণী দেবীর সঙ্গী। তাদের জন্য প্রত্যেক দিন মাছ-মাংস রান্না হয়। তাদের ভিড়ে বাড়ি যেন ছোট্ট খাটো চিড়িয়াখানা।
একটি ওষুধের দোকান রয়েছে বাণী দেবীর। একা হাতে সব কাজ সামলেও সময় মতো পশু পাখিদের খাওয়ান। কুকুর বিড়ালদের অসুখ হলে সেবা সুশ্রুষাও করেন বাণী দেবী। এই পশু পাখিদের নিয়েই আনন্দে দিব্যি চলছে বাণী দেবীর জীবন। উনি শুধু পশুপ্রেমী নন উনি পরিবেশ প্রেমীও। তাই তিনি পাড়ায় বৃক্ষরোপন করেন এবং সেইসব বৃক্ষ পরিচর্যাও করেন। অনেকেই অকারণে পাড়ার কুকুর বিড়ালদের উপর অত্যাচার করে। সেই নিয়েও ক্যামেরার সামনে অভিযোগ করেন বাণী দেবী। অবলা জীবদের প্রতি অত্যাচার হোক বা গাছ কেটে নেওয়া তিনি একদম সহ্য করতে পারেন না।
পশুপ্রেমী বাণী রায় বলেন, “আমার স্বামীও খুব পশু প্রেমী ছিলেন। আমার তো ওদের নিয়েই দিন কাটে। ওদের জন্য রান্না করি এবং নিজের হাতে খাইয়ে দি। ওদের অসুখ করলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। কিন্তু পাড়ার মানুষজন অকারণে অত্যাচার করে কুকুরদের উপর। আমার সেটা খুব রাগ হয় এবং একদম সহ্য হয় না।”
বর্তমান সমাজে মানুষ প্রচন্ড আত্মকেন্দ্রিক। প্রত্যেকে নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। সেখানে বাণী দেবীর এই ধরনের নিঃস্বার্থভাবে পশু প্রেম এবং পরিবেশ প্রেম সত্যি এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
আপনার মতামত লিখুন :