শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

সামান্য রোজগারে চলে সংসার, মাধ্যমিকে দশম স্থানাধিকারি বর্ধমানের সৌনকের স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২২, ১২:১৭ পিএম | আপডেট: জুন ৫, ২০২২, ০৬:২৬ পিএম

সামান্য রোজগারে চলে সংসার, মাধ্যমিকে দশম স্থানাধিকারি বর্ধমানের সৌনকের স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া
সামান্য রোজগারে চলে সংসার, মাধ্যমিকে দশম স্থানাধিকারি বর্ধমানের সৌনকের স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া

নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমানঃ বাবা পেশায় একজন টোটোচালক। বাবার সামান্য রোজগারেই চলে অনেক কষ্ট করে সংসার। লক্ষীর ভান্ডারের টাকাও ছেলের পড়াশুনার জন্যই ব্যয় করেন মা। তীব্র গরমে বাড়িতে সিলিং ফ্যানে গরম কাটে না। তাই সাধ হলেও, ছেলের মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে হাইস্পিড স্ট্যান্ড ফ্যান কেনার ইচ্ছা থাকলেও, তা সম্ভব হয়নি। এদিকে, এই পরিবারেরই ছেলে মাধ্যমিকে দশম স্থান অধিকার করেছে। আর্থিক অনটন জয় করে ডাক্তার হওয়াই এখন  লক্ষ্য সৌনকের।

বর্ধমান শহরের আলমগঞ্জের বাবা বর্ধমানেশ্বর  শিবতলায় একতলা বাড়ি সৌনকদের। দু’কামরার এই ঘরে বাবা ও মায়ের সঙ্গে থাকে সে। বাবা কৃষ্ণগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় পেশায় একজন টোটোচালক। আর মা করবী বন্দ্যোপাধ্যায় গৃহবধূ। কৃষ্ণগোপালবাবু জানিয়েছেন, শহরের বিভিন্ন রাস্তায় টোটো চালিয়ে তাঁর আয় দিনে ২০০ টাকা। সেই সামান্য আয় দিয়েই সংসার ও ছেলের পড়াশুনা চলে। অয়ন কুমার মল্লিক, কৌশিক রায়, সন্দীপ চন্দ্র- সৌনকের শিক্ষকরা বিনা পারিশ্রমিকে টিউশন পড়িয়েছেন। আবার পাড়ারই এক দাদা চয়ন সিংহ বিজ্ঞান বিভাগ পড়িয়ে সাহায্য করেছেন মেধাবী সৌনককে। এইভাবেই চলছে সৌনকের পড়াশুনা। আর সৌনক নিজেও মাধ্যমিকে বাবা-মার সঙ্গে সঙ্গে এদের সকলের মান রেখেছে।

সৌনক জানিয়েছে, গত বছর জুলাই মাসে তাদের বাড়িতে প্রথম তাঁদের স্মার্ট ফোন কেনা হয়। তিনজনই সেই ফোন ব্যবহার করেন। পাশাপাশি তার অনলাইন ক্লাসও হতো এই একটা ফোনেই। এবারের মাধ্যমিকে আর্থিক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে ভূগোলে ১০০,  বাংলা ও ভৌত বিজ্ঞানে ৯৯, লাইফ সায়েন্সে ৯৮, ইংরেজি ৯৬ এবং  ইতিহাসে ৯৩ পেয়েছে। সৌনক জানিয়েছে, সে আগামীদিনে একজন ভালো চিকিৎসক হতে চায়। নিউরোলজি নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছা রয়েছে সৌনকের। 

অন্যদিকে, সৌনকের মা করবী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অষ্টম শ্রেণীতে ভালো রেজাল্ট করার পর থেকে  প্রতিবছর ছেলে স্কলারশিপ পায়।  একই সঙ্গে একটি সংস্থার পক্ষ থেকে তার জন্য বই-খাতাও পাঠানো হয়। এছাড়াও বেশ কয়েকজন  শিক্ষক বিনা বেতনে  তাকে পড়িয়েছে। সবাই সাহায্য করায় তাঁদের ছেলে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিকে সাফল্যের মুখ দেখেছে।  কিন্তু করবী  দেবীর দুশ্চিন্তা হল, ছেলের ডাক্তারি পড়ানোর বিপুল খরচ কিভাবে আসবে? তিনি বলেন,  নিত্য প্রয়োজন ছাড়া শখ-আহ্লাদের জন্য সৌনকের বাবা-মা কোন বাড়তি খরচা করেন না। এমনকি লক্ষীর ভান্ডারে পাওয়া  টাকাও ছেলের পড়াশোনার জন্য সঞ্চয় করে রাখেন। ‘এভাবেই টাকা জমিয়ে ছেলেকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখছি‍‍`;  জানান করবী  দেবী। আবৃত্তি, ক্যুইজ,কয়েন সংগ্রহ,  ফুটবল নিয়ে চর্চার পাশাপাশি ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে বাবা মা পাশাপাশি দেশ ও দশের পাশে দাঁড়াতে চায় সৌনক।