বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-র। কোর কমিটিতে জায়গা না পেয়ে অভিমানে নিজের রাঢ়বঙ্গের পর্যবেক্ষক পদ ছেড়েছেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। সেইসঙ্গে ফেসবুকে দলের বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন সৌমিত্র খাঁ। ফেসবুকে দলের একাংশকে খোঁচা দিতেো পিছুপা হননি। তবে, এটাই প্রথমবার নয়, এর আগেও দলের একাংশের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন তিনি। আর এবারও বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-কে সেই একই ভূমিকায় দেখা গেল।
বুধবার বিজেপির রাজ্য নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করতে দেখা গেছে তাঁকে। এমনকি নিশানা থেকে বাদ যাননি দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। সৌমিত্র খাঁ-র স্পষ্ট কথা, ‘বিজেপিতে অযোগ্যের ভিড় জমেছে। যাঁরা মাথায় উপরে বসে রয়েছেন, তাঁদের অনেকে রাজনীতির কিছু বোঝেনই না।’
উল্লেখ্য, গত সোমবারই বিজেপির ২০ জন সদস্যের কোর কমিটি প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তাতে নাম নেই বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-র। শুধু তাই নয়, যুব মোর্চারও কোনও পদে তিনি নেই। সেখানে লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং অগ্নিমিত্রা পলকে রাখা হলেও তাঁর নাম নেই। অথচ এই সৌমিত্র খাঁ দলের কাছে যথেষ্ট ভরসাযোগ্য ছিলেন। যুব মোর্চার শীর্ষ পদ সামলানো থেকে পঞ্চায়েত ভোটে নিজের সংসদীয় এলাকার সংগঠনের নজর দেওয়া, সবেতেই তাঁর উপর দায়িত্ব দিয়েছিল বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। সব কাজই তিনি দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন। কিন্তু এতো কিছুর পরেও কোর কমিটিতে কেন তিনি জায়গা পেলেন না, তা নিয়েই অভিমানী হয়ে পড়েছেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র। এরপর মঙ্গলবার বিজেপির সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টনে রাঢ়বঙ্গে পঞ্চায়েতের দায়িত্ব দেওয়া হয় সৌমিত্রকে। সেই দায়িত্ব ছেড়ে দেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ। রাঢ়বঙ্গের পর্যবেক্ষক হিসেবেও তিনি আর থাকতে চান না। ওই পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন তিনি ইতিমধ্যেই।
সৌমিত্র খাঁ -র কথায়, ‘শুভেন্দুদা আর দিলীপদা ছাড়া বাকি সব অযোগ্য।’ এমনকি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে সৌমিত্র জানিয়েছেন, ‘উনি রাজ্য সভাপতি। আমি বেশি কিছু বলতে চাই না। শুধু এটুকু বলতে পারি, উনি শিক্ষানবিশ।’ সেই সঙ্গে তাঁর আরও সংযোজন, ‘পঞ্চায়েতে যদি বিজেপির ফলাফল খারাপ হয়, তাহলে শুভেন্দু অধিকারীর সমস্ত পরিশ্রম জলে যাবে।’ অন্যদিকে, পরবর্তী লোকসভা ভোটেও বাংলায় বিজেপি ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কাপ্রকাশ করেছেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। তবে, সৌমিত্রর এহেন মন্তব্যের পর দলের একাংশ আবার পাল্টা তাঁর যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
এদিকে, সৌমিত্রর নিশানায় যিনি, সেই সুকান্ত মজুমদার এখনও চুপ। প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ বিজেপির বঙ্গ সভাপতি। অথচ তাঁরই যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সৌমিত্র খাঁ। সূত্রের খবর ঘনিষ্ঠ মহলে সৌমিত্রর মন্তব্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও, সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি ‘কোনও মন্তব্য করব না’ বলেই চুপ থেকেছেন।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে ‘অযোগ্য’ বলেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ। যদিও দলীয় সাংসদের আক্রমণের বিষয়টিকে সংবাদ মাধ্যমের সামনে কোনও গুরুত্ব দিতেই চাইলেন না সুকান্ত মজুমদার। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচন উপলক্ষে দলের রাঢ়বঙ্গের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব থেকে সৌমিত্র খাঁর পদত্যাগ প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘পঞ্চায়েতে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বিজেপি যখন কাউকে দায়িত্ব দেয় তখন তাঁর সঙ্গে আলোচনা করা হয় না। তবে উনি অন্য কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য সেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির কথা জানিয়েছিলেন’।
একদিকে, সুকান্তকে আক্রমণ, অন্যদিকে, শুভেন্দু ও দিলীপ ঘোষের প্রশংসা করেছেন সৌমিত্র খাঁ। ‘শুভেন্দু, দিলীপ ছাড়া কাউকে রাজ্যনেতা বলেই মনে করি না।’ গতকাল এমনই মন্তব্য করেছিলেন তিনি। অথচ এই মন্তব্যের পরে তাঁর হয়ে সওয়াল করেছেন তাঁরই সতীর্থ রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় ও অনুপম হাজরারা।
রাজু বলেন, ‘সৌমিত্র দু’বারের সাংসদ। এমএলএ ছিলেন। তিনটি দলের যুব সভাপতি ছিলেন। প্রচুর অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাঁর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর জন্য দলকে সচেষ্ট হওয়া উচিত’। অন্যদিকে, সৌমিত্রর হয়ে সওয়াল করেছেন অনপমও। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, ‘কমিটিতে ঢুকতে অসফল হইয়া সৌমিত্র খান তথা আরো যোগ্য বেশ কয়েকজন প্রমাণ করিলেন যে উনারা এখনও অব্দি সংগঠন বাবুর সিন্ডিকেটের অংশ হইতে পারেন নাই। মোদ্দা কথা হল। হারি হারব নাহি লাজ। মিলেমিশে করিব না কাজ’। যদিও সৌমিত্র খাঁর প্রকাশ্যে দলেরই নেতাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগকে ‘শৃঙ্খলার বিচ্যুতি’ হিসেবেই দেখছে বঙ্গ বিজেপি।
আপনার মতামত লিখুন :