শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

হাসপাতালে টিটেনাস নিতে গিয়ে পরিবর্তে মিলল কুকুরে কামড়ানোর প্রতিষেধক! তীব্র চাঞ্চল্য এলাকায়

আত্রেয়ী সেন | তনুজ জৈন

প্রকাশিত: জুন ২, ২০২২, ০৮:০৫ পিএম | আপডেট: জুন ৩, ২০২২, ০২:০৫ এএম

হাসপাতালে টিটেনাস নিতে গিয়ে পরিবর্তে মিলল কুকুরে কামড়ানোর প্রতিষেধক! তীব্র চাঞ্চল্য এলাকায়
হাসপাতালে টিটেনাস নিতে গিয়ে পরিবর্তে মিলল কুকুরে কামড়ানোর প্রতিষেধক! তীব্র চাঞ্চল্য এলাকায়

নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহঃ অসাবধানতার কারণে কাঁচিতে হাতের তালুর কিছুটা অংশ কেটে গিয়েছিল। এরপর দেরি না করে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে গিয়েছিলেন টিটেনাস ইনজেকশন নিতে। কিন্তু এরপরই ঘটল ভয়ঙ্কর ঘটনা। 

টিটেনাস ইনজেকশনের পরিবর্তে ওই মহিলাকে দেওয়া হল কুকুরে কামড়ানোর ইনজেকশন। এই ইনজেকশন দেওয়ার কারণে রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই মহিলা। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। 

বাড়ি ফেরার পর থেকেই ক্রমাগত মাথা ঘুরতে থাকে, সেই সঙ্গে বমিও করতে থাকেন ওই মহিলা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লক সদর এলাকার জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। এদিকে, এই বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্তারা। জানা গিয়েছে ওই হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মী নাকি ভুলবশত তাঁকে কুকুরে কামড়ানোর প্রতিষেধক দিয়ে দেন। এদিকে, এই ঘটনার জেরে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক সুব্রত চৌধুরীকে কে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের প্রশ্ন বড় কোনও ক্ষতি হয়ে গেলে তার দায় কে নিত?

যদিও আতঙ্কের কারণ নেই বলে আশ্বাস দিয়েছেন হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের বিএমওএইচ। তবে এই ঘটনাটি কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন বিরোধীরা। রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বেহাল বলে খোঁচা দিয়েছেন স্থানীয় রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর সদর এলাকার কলম পাড়ার বাসিন্দা ওই মহিলা, নাম সঙ্গীতা গুপ্তা। তিনি একটি সেলাইয়ের দোকান চালান। সেলাইয়ের কাজ করতে গিয়েই তাঁর হাতের তালু কেটে যায়। এরপর দেরি না করে তিনি স্থানীয় হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে যান টিটেনাসের টিকা নিতে। সেসময় হাসপাতালে কুকুর বিড়াল কামড়ানোর ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছিল। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান তাঁকে টিটেনাস ইনজেকশন নিতে হবে। এরপরই কর্তব্যরত নার্স সঙ্গীতা দেবীর হাতে পরপর দুটি ইনজেকশন দিয়ে দেন। 

এরপর ফের তৃতীয় ইনজেকশন দিতে এলে ওই মহিলার সন্দেহ হয় এবং তিনি ইনজেকশন দিতে বাধা দেন। তিনি নার্সকে জিজ্ঞাসা করেন তাঁকে এতোগুলি ইনজেকশন কেন দেওয়া হচ্ছে?

এরপরই সঙ্গীতাদেবী জানতে পারেন ভুলবশত নার্স তাঁকে কুকুরে কামড়ানোর অ্যান্টি রেবিস ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছেন। সঙ্গীতা দেবী দেরি না করে হাসপাতালের বি এম ও এইচ ডক্টর অমল কৃষ্ণ মন্ডলের কাছে ছুটে যান এবং পুরো ঘটনা খুলে বলেন। তাঁরা তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ভুল করে তাঁকে কুকুরে কামড়ানোর ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। এরপর ফের তাঁকে টিটেনাস নেওয়ার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সঙ্গে এও জানিয়ে দেওয়া হয় যে, কুকুরে কামড়ানোর পরবর্তী ভ্যাকসিনও নাকি নিতে হবে পরের দিন গিয়ে। 

এতে সঙ্গীতা গুপ্তার মনে আশঙ্কা তৈরি হয়। তিনি বাড়িতে গিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন যে, বাড়ি ফিরেই তিনি বমি করতে শুরু করেন। মাথা ঘোরার উপসর্গও ছিল। তাঁর পরিবারের দাবি, ভুল ইনজেকশন দেওয়ার জন্যই এই অবস্থা। 

এই ঘটনা প্রসঙ্গে ওই গৃহবধূ জানিয়েছেন, ‘সকালে কাজ করতে করতে কাঁচি দিয়ে আমার হাত কেটে গিয়েছিল। আমি দেরি না করে হাসপাতালে যাই টিটেনাস নেওয়ার জন্য। হাসপাতালে তখন কুকুর বিড়াল কামড়ানোর ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছিল। আমাকেও সেখানে উপস্থিত থাকা নার্স কুকুরে কামড়ানো ইনজেকশন দিয়ে দেন। তারপর থেকে আমি আতঙ্কে রয়েছি।হাসপাতালের চিকিৎসক অমল কৃষ্ণ মণ্ডল আমাকে জানিয়েছেন ভয়ের কিছু নেই। এরপরে আমি বাড়িতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ি। জানিনা কি হবে। তবে হাসপাতালে চিকিৎসার পরিসেবা এত বিশৃংখল কেন।’

অন্যদিকে, এই ঘটনার বিষয়ে হরিশচন্দ্রপুর গ্রামে হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল যুব হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লক সভাপতি জিয়াউর রহমান জানান, ‘ঘটনার কথা শুনেছি। কোথাও একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। সেই সময় কুকুর বিড়ালের ভ্যাকসিন দেওয়ার টাইম ছিল। সেখানেই গন্ডগোলটা হয়েছে। আমরা সব কিছু খতিয়ে দেখছি।’ যদিও এ প্রসঙ্গে মুখে কার্যত কুলুপ এঁটেছেন হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। ক্যামেরার সামনে চিকিৎসক সুব্রত চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। কিন্তু হরিশচন্দ্রপুর গ্রামে হাসপাতালে এই ধরনের চিকিৎসা পরিষেবা দেখে ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা।