নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহঃ প্রশাসনিক পদে যারা কাজ করেন, তাঁদের বদলি নতুন কোনও ঘটনা নয়। প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় কাজে যোগ দেন প্রশাসনিক কর্তারা। এরপর কাজের মধ্যে দিয়েই থেকে যান সহকর্মী এবং সেখানকার মানুষের মনে। এলাকার মানুষের সঙ্গে গড়ে ওঠে এক আত্মিক সম্পর্ক। তাও তাঁর কাজের মধ্যে দিয়েই। ঠিক যেমন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয় কুমার দাস। আর তাই বদলি খুব স্বাভাবিক ঘটনা হলেও, সঞ্জয় কুমার দাসের এই চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না, তাঁর সহকর্মী থেকে শুরু করে এলাকার বাসিন্দারা। ভারাক্রান্ত মনে, চোখের জলে আইসিকে বিদায় জানালেন হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ কর্তা থেকে শুরু করে সিভিক কনস্টেবল থেকে রাজনৈতিক নেতা। মন খারাপ সকলের। কাজের মধ্যে দিয়েই তিনি সকলের মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন।
মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি’র দায়িত্ব সামলাতে সামলাতে এলাকার মানুষের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ সবকিছুর সঙ্গী হয়ে গিয়েছিলেন। তাই তাঁর অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যাওয়াটা সকলের কাছেই অত্যন্ত বেদনার। সঞ্জয় কুমার দাস বদলি হয়ে চলে গেলেন ডালখোলা সার্কেল ইন্সপেক্টর পদে। প্রায় তিন বছরের বেশি সময় ধরে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি।
রবিবার রাতে ছিল আইসি সঞ্জয় কুমার দাসের বিদায়ী সংবর্ধনা। ভারাক্রান্ত মনে চোখের জলে আইসিকে বিদায় জানালেন ভারাক্রান্ত মনে তাঁকে বিদায় জানালেন থানার সকল স্তরের পুলিশ কর্মীরা। চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি কেউই। তা সে অফিসারই হোক বা হোমগার্ড বা সিভিক ভলেন্টিয়ার। এর প্রধান কারণ হরিশ্চন্দ্রপুর থানার সকলকেই তিনি নিজের পরিবার বানিয়ে ফেলেছিলেন।
রবিবার হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসির বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মালদা জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জম্মু রহমান, হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকায় তৃণমূলের অঞ্চল চেয়ারম্যান সঞ্জীব গুপ্তা, ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক পবন কেডিয়া-সহ অন্যান্য বিশিষ্ট জনেরা। সকলেরই মন খারাপ সঞ্জয় কুমার দাসের চলে যাওয়ায়।
দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় ধরে থানার দায়িত্ব নিয়ে তিনি যেভাবে কাজ করেছেন, তা মন জয় করে নিয়েছে এলাকার সকল স্তরের মানুষের। কাজের মধ্যে দিয়েই বারবার দেখা গেছে সঞ্জয় কুমার দাসের মানবিক রূপ। কখনও এলাকার অনাথ মেয়ের বিয়ে দেওয়া, কখনও হারিয়ে যাওয়া শিশুকে সযত্নে তার নিজের জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়া, আবার অতি সম্প্রতি থানার কাছেই এক দাব বিক্রেতা নিজের গায়ে আগুন লাগালে, আইসি নিজে ছুটে গিয়ে, তাঁর প্রাণ বাঁচানো থেকে শুরু করে হাসপাতালে ভরতিও করেন।
এখানেই শেষ নয়, করোনার সময়ও বারবার দেখা গেছে যে, আইসির নেতৃত্বে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশের জীবন বাজি রেখে মানুষকে সচেতন করেছে। গরিব মানুষদের পাশে থেকে তাঁদের সহযোগিতা করেছে। রবিবার চলে যাওয়ার বেলাতেও একটি কমিউনিটি হলের উদ্বোধন করে গেলেন। সঙ্গে এলাকাবাসীর সার্বিক মঙ্গলকামনা করে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন আগামী দিনেও। তাই এমন মানুষের চলে যাওয়ায় সকলের মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
প্রসঙ্গত, আইসি হিসেবে এই থানার দায়িত্বে এসে অনেক সমস্যার সমাধান করেন সঞ্জয় কুমার দাস। সাজিয়ে তোলেন থানাকে। খুব সুন্দরভাবে এলাকাবাসীর সঙ্গে থানার যোগসূত্র গড়ে তোলেন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। পাশাপাশি এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রেও আইসির নেতৃত্বে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার ভূমিকাও ছিল যথেষ্ট প্রশংসনীয়।
অন্যদিকে, বিহার সীমান্তবর্তী হরিশ্চন্দ্রপুরে অপরাধীদের যে দাপট না দৌরাত্ম ছিল আগে, তা কমাতেও সচেষ্ট হয়েছিলেন তিনি। বিহারে পাচার হয়ে যাওয়া মেয়েকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর পরিবারের হাতে। আইসির নেতৃত্বে এই ধরনের অনেক সাফল্যের কাহিনি রয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশের। এক কথায় সঞ্জয় কুমার দাস নিজের দায়িত্ব পালনে ১০০ শতাংশ দেওয়ার চেষ্টায় যথেষ্ট সফল। তাইতো সকলের কাছে উনি এতো প্রিয়, সকলের এতো কাছের মানুষ হয়ে উঠেছেন মাত্র ৩ বছরের মধ্যেই। ওনার কাজ মানুষকে এতোটাই আশ্বস্ত করেছে যে, এলাকার মানুষ কামনা করেছেন, আগামী দিনেও উনি যেখানেই থাকুন না কেন, যেন ওনার কাজে সফল হন। বিদায়ী আইসি সঞ্জয় কুমার দাস জানিয়েছেন, ‘এই কয় বছরে এখানে কাজ করে খুব ভালো লেগেছে। এলাকার মানুষ খুব ভালো এবং তাঁদের কাছ থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। আমি যে কোন দরকারে এলাকার পাশে থাকবো।’
আর অনুষ্ঠানে উপস্থিত তৃণমূল জেলা সাধারণ সম্পাদক জম্মু রহমান বলেন, ‘আজ উনার বিদায় সম্বর্ধনা ছিল। উনি যেভাবে এলাকার জন্য কাজ করেছেন তা প্রশংসনীয়়। কিন্তু সার্ভিস রুল অনুযায়ী ওনাকে তো যেতেই হবে বদলি হয়ে। আমরা ওনার সার্বিক সাফল্য কামনা করি। হরিশ্চন্দ্রপুর বাসি ওনাকে মনে রাখবে।’
আপনার মতামত লিখুন :