রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

পড়াশোনার খরচ যোগাতে খেলনা ফেরি! খড়গপুর IIT-তে সুযোগ পেলেন বাঁকুড়ার এই তরুণ

মৌসুমী মোদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২২, ০৫:৪৪ পিএম | আপডেট: নভেম্বর ৪, ২০২২, ১১:৪৪ পিএম

পড়াশোনার খরচ যোগাতে খেলনা ফেরি! খড়গপুর IIT-তে সুযোগ পেলেন বাঁকুড়ার এই তরুণ
পড়াশোনার খরচ যোগাতে খেলনা ফেরি! খড়গপুর IIT-তে সুযোগ পেলেন বাঁকুড়ার এই তরুণ

পাড়ায় পাড়ায় ফেরি করতে করতেই স্বপ্ন পূরণ। খড়গপুর আইআইটিতে (IIT Kharagpur) ভর্তি হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলেন ফেরিওয়ালা ছোটন কর্মকার। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং (Industrial Engineering) নিয়ে বিটেক এ ভর্তি হয়েছেন খড়গপুর আইআইটিতে।ব‍‍`চুরি, ফিতে, খেলনা নেবে গো...‍‍` হাঁক দিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ফেরি করতেন। তা বিক্রি করে খুব একটা আয় হত না। কোনও দিন আয় একেবারে হত না বললেই চলে। তবে দু‍‍`চোখে স্বপ্ন ছিল অনেক বড় হওয়ার। আর সেই স্বপ্ন পূরণ করার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করতেন তিনি।

কখনও পড়াশোনা ছাড়েননি। আর ফেরি করতে করতেই এবার নিজের স্বপ্ন পূরণ করার লক্ষ্যে আরও একধাপ পৌঁছে গেলেন। পাড়ায় পাড়ায় ফেরি করে বেরনো সেই ছেলেটা আজ সর্বভারতীয় স্তরের একটি প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া! একসময় সংসার এবং পড়াশোনার খরচ যোগাতে ফেরিওয়ালা হতে হয়েছিল। গ্রামের পথে ফেরি করতে করতে কী ভাবে যে নিজের স্বপ্নকে ছুঁয়ে ফেলেছেন তা আজও তাঁর নিজের অজানা। খড়গপুর আইআইটিতে ভর্তি হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলেন বাঁকুড়া জেলার শালতোড়ার এক প্রত্যন্ত গ্রাম হল পাবড়ার বাসিন্দা ফেরিওয়ালা ছোটন কর্মকার।

বাবা কানাই কর্মকার নিজেও একজন ফেরিওয়ালা। বাবা, মা ও দাদাকে নিয়ে ছোট্ট সংসার ছোটনের। সংসারের হাল ধরতে বাবার পথেই পথিক হয়েছিলেন ছোটন। তাঁদের সংসার একেবারেই ভালো করে চলত না। কোনওরকমে টেনেটুনে চলছিল। তবে শত কষ্টের মধ্যেও পড়াশোনা ছাড়েননি ছোটন। আর তার জেরেই সর্বভারতীয় স্তরে এন্টাস পরীক্ষায় সাফল্য পান তিনি।

গ্রামেরই এর সরকারি স্কুল থেকে তাঁর পড়াশোনা। মাঝে মধ্যে বাবার সাইকেল নিয়ে গ্রামে গ্রামে চুড়ি, মালা ফেরি করে বেড়াতেন। কিন্তু, স্বপ্ন দেখতেন অনেক বড় হওয়ার। আর তাই কষ্টের মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। আর তার জেরেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বিটেক এ ভর্তি হয়েছেন খড়গপুর আইআইটিতে। ছোটনের কাছে এ যেন স্বপ্নের মতোই!

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি পৌঁছন আইআইটি খড়গপুরে। পিঠে ভারী ব্যাগ,অগোছালো চুল, চোখমুখে ভয় নিয়েই বৃহস্পতিবার খড়গপুর আইআইটিতে পা রেখেছিলেন ছোটন। সেখানে ইতস্তত অবস্থায় ঘুরতে দেখেন খড়গপুর আইআইটির কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মীরা। তড়িঘড়ি নিরাপত্তা কর্মীরা তাঁর পথ আটকায়। এরপর বৈধ নথি দেখিয়ে আইআইটিতে প্রবেশ করেন তিনি।

বাবা কানাইবাবু জানেন না আইআইটি কী! এই সম্পর্কে খুব বেশি ধারণাও নেই। তবে ছেলে যে পড়াশোনায় সফল হয়েছে তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি তাঁর। আর তার জেরেই বেজায় খুশি তিনি। এদিকে ছেলে যে আইআইটিতে পৌঁছবে তা ভাবতে পারেননি ছোটনের মা-ও। তাঁর স্বপ্ন ছেলে যেন আরও বড় হয়। আর ছোটনের চোখেও সেই একই স্বপ্ন। সেই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছে বাঁকুড়ার এই তরুণ।