বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ বীরভূমের তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষীর নাম অনেকের কাছেই অজানা ছিল। কিন্তু গতকালের পর থেকে এই নামটাই এখন চর্চায়। গরুপাচার মামলায় গতকালই গ্রেফতার হয়েছেন অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেন। বৃহস্পতিবার দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই। বৃহস্পতিবার তাঁকে ফের একদফা জিজ্ঞাসাবাদ করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা। এরপরই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সূত্রের খবর, আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে সায়গল হোসেনকে। তাঁর বয়ানে একাধিক অসঙ্গতি মিলেছে বলেই খবর।
এই সায়গল হোসেনই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটের কাছাকাছি আইনজীবী সঞ্জীব দাঁয়ের সঙ্গে সিবিআই-এর ডাকে নিজাম প্যালেসে যান সায়গল হোসেন। তাঁর বয়ানে একাধিক অসঙ্গতি আছে বলেই অভিযোগ রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে দাবি করা হয়েছে যে, আয়ের সঙ্গে সম্পত্তির হিসেব দেখাতে পারেননি তিনি। এদিকে, এই সায়গল হোসেনের সম্পত্তি চোখ ধাঁধানোর মতোই। এমনকি বাড়ির পরিচারিকার নামেও রয়েছে ফ্ল্যাট।
সায়গলের নিউটাউনের ফ্ল্যাট সম্পর্কে এমনই তথ্য প্রকাশ্যে এল। কলকাতার মতো জায়গায় একটা নয়, কলকাতার নিউটাউনে সায়গলের মোট ৩টে ফ্ল্যাটের হদিশ পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যেই একটি সায়গল তাঁর বাড়ির পরিচারিকার নামে কেনা। যা নিঃসন্দেহে আশ্চর্যজনক। বাকি দুটি তাঁর প্রাথমিকের শিক্ষিকা স্ত্রীর নামে কিনেছিলেন।
সিবিআই সূত্রে খবর, নিউটউনের তিনটি ফ্ল্যাট থেকেই প্রচুর জমির দলিল এবং সোনার গয়নার হদিশ পেয়েছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। সায়গলের ফ্ল্যাট থেকে কয়েক লক্ষ টাকার সোনার গয়না বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। জানা গিয়েছে, এর মধ্যেই বেশিরভাগ সম্পত্তি-ই সায়গল কিনেছেন তাঁর মা এবং স্ত্রীর নামে। তবে, এরই মধ্যে একটি ফ্ল্যাট তিনি পরিচারিকার নামে কিনেছিলেন। কেন পরিচারিকার নামে ফ্ল্যাট কেনেন সায়গল? সেই প্রশ্নই এখন ভাবাচ্ছে তদন্তকারী আধিকারিকদের।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সায়গল হোসেনকে গ্রেফতার করে সিবিআই। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। এরপর সারারাত জেরা করা হয় সায়গলকে। সায়গলের সম্পত্তির দলিল ও নথি কার কার নামে রয়েছে? তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট কতগুলি? কোন কোন অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন বেশি চলত? সেসবই জানার চেষ্টা করছেন এই মুহূর্তে তদন্তকারীরা।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, সায়গলের নামে একাধিক অ্যাকাউন্ট, একাধিক জমির দলিল পাওয়া গিয়েছে, যার সঙ্গে তাঁর বেতনের কোনও সামঞ্জস্য নেই। এর আগেও মঙ্গলবার সায়গলকে জেরা করেছিল সিবিআই। এই নিয়ে ৫ বার জিজ্ঞাসাবাদ করা হল তাঁকে।
এদিকে, গত সপ্তাহেই সায়গল হোসেনের মুর্শিদাবাদের ডোমকলের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। সেদিন প্রায় ১৫ ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। সেখানে প্রায় সাড়ে ৭ ঘণ্টায় জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। এরপর ফের দুর্গাপুরেও সিবিআই-এর অস্থায়ী অফিসেও তাঁকে জেরা করা হয়। গরুপাচার কাণ্ডে কারা লাভবান হন, এই পাচারে তাঁর কী ভূমিকা ছিল? টাকার উৎস কী? তাঁর হাত দিয়ে টাকা কোথায় পাঠানো হত? এসবই জানতে চান সিবিআই-এর আধিকারিকরা। এর আগে এই মামলায় যাঁদের জেরা করা হয়েছে, তাঁদের থেকেই অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের নাম উঠে আসে। এই মামলায় তাঁর ভূমিকাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।
আপনার মতামত লিখুন :