শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

দেশব্যাপী পরপর দু’দিনের সাধারণ ধর্মঘট! প্রথমদিনেই বিক্ষিপ্ত অশান্তি বিভিন্ন জায়গায়

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২২, ০৯:৫৮ এএম | আপডেট: মার্চ ২৮, ২০২২, ০৬:১০ পিএম

দেশব্যাপী পরপর দু’দিনের সাধারণ ধর্মঘট! প্রথমদিনেই বিক্ষিপ্ত অশান্তি বিভিন্ন জায়গায়
দেশব্যাপী পরপর দু’দিনের সাধারণ ধর্মঘট! প্রথমদিনেই বিক্ষিপ্ত অশান্তি বিভিন্ন জায়গায় / নিজস্ব ছবি

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ চলতি মাসের ২৮ এবং ২৯ তারিখ অর্থাৎ সোম এবং মঙ্গলবার দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাম-কংগ্রেস সহ ট্রেড ইউনিয়নগুলি। কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে শ্রমিক, কৃষক এবং জনবিরোধী নীতি প্রণয়নের অভিযোগ তুলে, উক্ত দু’দিনের ভারত বনধের ডাক দিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। মোট ১২ দফা দাবি জানিয়ে, আজ ও আগামিকাল ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। 

ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ এবং ব্যাঙ্কিং আইন সংশোধনী বিল ২০২১-এর প্রতিবাদে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ব্যাঙ্কের শ্রমিক সংগঠনগুলি। চলতি মাসের ২৮ এবং ২৯ মার্চ এসবিআই, পিএনবি-র মতো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলির প্রায় ৯ লক্ষ কর্মী ধর্মঘটে যোগ দিতে চলেছেন বলে জানা গিয়েছে। এই ধর্মঘটে সামিল হওয়ার কথা ঘোষণা করেছে ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশন, ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া এবং অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন। এ ব্যাপারে এসবিআই কর্তৃপক্ষকে তাঁরা জানিয়েওছে। কাজেই স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়তে চলেছে দেশের ব্যাঙ্কিং পরিষেবাতেও। এমনিতেই গতকাল রবিবার থাকায় ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল। পাশাপাশি এই ধর্মঘটে সামিল হয়েছে রেল এবং পরিবহন কর্মীরাও। কাজেই পরিবহণ ব্যবস্থাতেও এই ধর্মঘটের প্রভাব পড়তে চলেছে। 

বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার পরই এই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। এদিকে, ধর্মঘটে যাতে বাংলায় সকল পরিষেবা স্বাভাবিক থাকে এবং জনজীবন সচল রাখতে পদক্ষে নিয়েছে রাজ্য সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছে, ধর্মঘটের দিন সরকারি অফিস, সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন অফিসে হাজিরা বাধ্যতামূলক। শনিবার নবান্নের পক্ষ থেকে নির্দেশিকা জারি করে স্পষ্ট জানানো হয়েছে যে, সাধারণ ধর্মঘটের দু’দিন অফিসে হাজিরা বাধ্যতামূলক। অনুপস্থিত থাকলে, শো-কজ নোটিস দেওয়া হবে। শুধু নোটিস পাঠানোই নয়, জবাব না দিলে, শৃঙ্খলাভঙ্গের নিয়মে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে রাজ্য সরকার। অনুপস্থিতির সঠিক কারণ দেখাতে না পারলে, মাইনেও কেটে নেওয়া হবে। 

অন্যদিকে, যৌথ ফোরামের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, কর্মীদের সঞ্চয়ের উপরে কোপ বসাচ্ছে কেন্দ্রের বিজেপিশাসিত সরকার। ইপিএফ-এ সুদের হাড় ৮.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮.১ শতাংশ করা হয়েছে। তার সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ, কেরোসিন, পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির মধ্যে দিয়ে মধ্যবিত্ত মানুষকে চাপে ফেলছে কেন্দ্র সরকার। 

এদিন দফায় দফায় পথ অবরোধ করা হয়। কখনও বিটি রোডের চিড়িয়ামোড় আবার কখনও কখনও ভিআইপি মোড়ের কাছে অবরোধ করেন ধর্মঘটকারীরা। পরে পুলিশ এসে তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর পরিস্থিতি ফের স্বাভাবিক হয়। আজ সকালে সুকান্ত সেতুতেও অবরোধ হয়। 

আবার আজ সকালে বনধের প্রথম দিনে, যাদবপুরে প্রভাব পড়ে। এদিন সকালে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায় সমর্থক এবং অটো চালকদের মধ্যে। এখানেও পুলিশ এসে ধর্মঘটিদের সরিয়ে দেয়। এরপরই যাদবপুর স্টেশনে গিয়ে রেল অবরোধ করেন ধর্মঘটকারীরা। 

আজ সকাল থেকেই পথে নেমে পড়েছে সিপিএমের কর্মী সমর্থকেরা। জয়নগর থানার দক্ষিণ বারাসাত গ্রাম-পঞ্চায়েতের পদ্ধেরহাট এলাকায় জয়নগর-বারুইপুর সংযোগকারী কুলপি রোড অবরোধ করেন বামকর্মী সমর্থকরা। এর জেরে কুলপি রোড তথা ১ নম্বর রাজ্য সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

দু’দিনের এই ধর্মঘটের আজ প্রথম দিনে, চুঁচুড়া বাস টার্মিনাল থেকে কোনও বাস এখনও পর্যন্ত বের হয়নি বলেই খবর। সকালে ধর্মঘটের সমর্থনে পিকেটিং হয়। বাস-ট্রেকার রাস্তায় নামেনি। শুধু দু-একটা অটো ও টোটো চলছে। 

জানা গিয়েছে, এই দু’দিনের ধর্মঘটে রেল এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের শ্রমিকরাও শামিল হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে, কয়লা, ইস্পাত, তেল, টেলিকম, পোস্টাল, আয়কর, তামা, এবং বিমা ক্ষেত্রের কর্মীরাও জানিয়েছেন যে, এই ধর্মঘটে তাঁরাও যোগ দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, নবান্নের পক্ষ থেকে জারি করা নির্দেশিকা অনুযায়ী, হাসপাতালে ভর্তি থাকা, বাড়ির কোনও সদস্যের মৃত্যুর ক্ষেত্রে, আগে থেকে দীর্ঘ অসুস্থতার জেরে নেওয়া ছুটির ক্ষেত্রে, চাইল্ড কেয়ার লিভ, মেটারনিটি লিভ ও বাকি অন্য যে কোনও ছুটি যা ২৫ মার্চের আগে থেকে নেওয়া রয়েছে, সেইসব ক্ষেত্রে বনধ সংক্রান্ত নবান্নের নির্দেশিকা লাগু হবে না।