শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

অষ্টম শ্রেণী পাশ সামান্য মাছ ব্যবসায়ী থেকে দাপুটে নেতা! বীরভূমের ‘বাদশা’র রাজনৈতিক যাত্রা

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২২, ০৩:৩৭ পিএম | আপডেট: আগস্ট ১১, ২০২২, ০৯:৫১ পিএম

অষ্টম শ্রেণী পাশ সামান্য মাছ ব্যবসায়ী থেকে দাপুটে নেতা! বীরভূমের ‘বাদশা’র রাজনৈতিক যাত্রা
অষ্টম শ্রেণী পাশ সামান্য মাছ ব্যবসায়ী থেকে দাপুটে নেতা! বীরভূমের ‘বাদশা’র রাজনৈতিক যাত্রা

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ অবশেষে সিবিআই ও অনুব্রতর মধ্যে লুকোচুরি খেলা শেষ। রাখি পূর্ণিমার দিনেই আটক অনুব্রত মণ্ডল। ১০ বার তলব করার মধ্যে মাত্র একবার সাড়া দিয়েছেন সিবিআই-এর ডাকে গরু পাচার মামলায়। এরপর আর সেই ডাক অমান্য করতে পারলেন না। সেই সুযোগই তাঁকে দেওয়া হয়নি। বুধবারের তলব এড়ানোর পরেই, লক্ষ্মীবারে কেন্দ্রীয়বাহিনী সহযোগে তাঁর বোলপুরের বাড়িতে হাজির স্বয়ং সিবিআই। এরপর টানটান নাটকের পর, বাড়ি থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার জালে অনুব্রত মণ্ডল। 
বিহারের ‘বেতাজ বাদশা’ বলা যায় অনুব্রত মণ্ডলকে। এক সানাম্য অষ্টম শ্রেণী পাশ পেশায় মাছ ব্যবসায়ী ব্যক্তির বীরভূমের দাপুটে রাজনৈতিক নেতা হয়ে ওঠার যাত্রাপথটাও বেশ চমকপ্রদ। রাজনৈতিক দলের নেতা হওয়ার সুবাদেই বোলপুরের নীচুপট্টিতে ছোট ঘর থেকে আজ তাঁর নীল রঙের প্রসাদোপম বাড়ি। বোলপুরে তো অবশ্যই এমনকি সারা বাংলায় তাঁর নাম জানেন না, এমন লোক প্রায় নেই বললেই চলে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম উল্লেখযোগ্য সৈনিক এই অনুব্রত মণ্ডল। ২০১১ সালের পর বাংলার রাজনীতিতে খুবই উল্লেখযোগ্য নাম হয়ে ওঠে এই অনুব্রত মণ্ডল। এককথায় লালমাটির তৃণমূলের ভোট বাক্সের অন্যতম ভরসার নাম অনুব্রত। বারবার খবরের শিরোনামে এসেছেন তাঁর আলটপকা মন্তব্য-এর কারণে। বিরোধী শিবিরের নেতা-কর্মীদের চমকানো কথাবার্তাও তাঁকে খবরে বিশেষ জায়গা করে দিয়েছে। চড়াম চড়াম ঢাকের বোল, গুড়-বাতাসা থেকে একুশের খেলা হবে ইত্যাদি অনুব্রতর বাণী বারবার খবরে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে।

বিজেপি শিবিরে আলটপকা মন্তব্যের জন্য যেমন দিলীপ ঘোষ রয়েছেন, তেমনই তৃণমূল কংগ্রেসের অনুব্রত মণ্ডল। প্রথম থেকেই কংগ্রেস ঘরানায় মানুষ অনুব্রত মণ্ডল। পরে ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি হওয়ার পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগত কর্মী হয়ে ওঠেন তিনি। সেই সময় বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি ছিলেন সুশোভন বন্দোপাধ্যায়। প্রথম দিকে দলে তেমন গুরুত্ব ছিল না কেষ্টর। কাজেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় পিছনের সারির নেতাদের এক মুখ ছিলেন তিনি। সুশোভনের পর জেলা সভাপতি হন বর্তমান ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দোপাধ্যায়। সেই সময় থেকেই ক্রমশ দলে নিজের আলাদা জায়গা করে নিতে শুরু করেন অনুব্রত মণ্ডল। 

এরপর ২০০৯ সালে আশিস বন্দোপাধ্যায়কে দলের চেয়ারম্যান করে অনুব্রতকে দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর থেকেই জেলায় তাঁর একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার শুরু। একের পর এক বিধানসভা, দুটি লোকসভা দখলে এনে মুখ্যমন্ত্রীর নেক নজরে পড়েন এবং প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন। জেলা কমিটি থেকে রাজ্য কমিটির সদস্য হন। দলের অর্থ যোগান দিতেও তিনি ছিলেন প্রথম সারিতে।কিন্তু একটা সময়ের পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে গরু, কয়লা ও বালি পাচার-সহ একাধিক অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এখানেই শেষ নয়, প্রভাবশালী হিসেবে বিভিন্ন সময় তাঁর বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার, প্রভাব খাটানোর অভিযোগও ওঠে। অবস্থা এমনই হয় যে, বিধানসভা নির্বাচনের দিন গৃহবন্দি রাখা হয় এই দাপুটে নেতাকে।

অভিযোগ এও যে, রাজস্ব আদায়ের নামে জেলার পাথর শিল্পাঞ্চলে ছয়টি টোল গেট বসিয়ে তোলা আদায় শুরু করে তার ’ঘনিষ্ঠ’রা। ছয়টি টোল গেটে কোটি কোটি টাকা আদায় হত। এর মধ্যে সামান্য একটি অংশ সরকারের ঘরে জমা দিয়ে বেশিরভাগ টাকাই ঢুকত অনুব্রতর ঘরে। 

অন্যদিকে, বিরোধীদের দাবি, অনুব্রত মণ্ডলের সম্পত্তির হিসাব করলে পরিমাণ হাজার কোটির কম হবে না। সেই বিপুল টাকাই এবার কাল হয়ে দাঁড়াল কেষ্টর জন্য। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিকমহল। উল্লেখ্য, বীরভূমে বিরোধীরা তো এও বলেন যে, অনুব্রতর ডাকে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জয় খায় সেখানে। তবে, এই অনুব্রত মণ্ডলই আজ পর্যন্ত কোনওদিন ভোটে দাঁড়াননি। তাও তাঁকে কেন্দ্র করেই বীরভূমের ভোট নিয়ন্ত্রিত হত। মন্ত্রী বা বিধায়ক না হয়েও জেলার বাইরেও তাঁর প্রভাব ভালোই ছিল। সামান্য এক মুদি দোকানির সেদিনের সেই অষ্টম পাশ, ছেলেটিই গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বীরভূমের ভোটের বিধাতা। সেই দাপুটে অনুব্রতই এখন সিবিআই-এর জালে জড়িয়ে পুরোপুরি বিধ্বস্ত।