শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

নাম বিভ্রাটের জের! গোপালের পরিবর্তে কপাল পুড়ল নিরপরাধ পঁয়ষট্টির বৃদ্ধের

চৈত্রী আদক | তনুজ জৈন

প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২২, ০৫:১৭ পিএম | আপডেট: জুন ৩০, ২০২২, ১১:১৭ পিএম

নাম বিভ্রাটের জের! গোপালের পরিবর্তে কপাল পুড়ল নিরপরাধ পঁয়ষট্টির বৃদ্ধের
নাম বিভ্রাটের জের! গোপালের পরিবর্তে কপাল পুড়ল নিরপরাধ পঁয়ষট্টির বৃদ্ধের

বংনিউজ২৪×৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ নাম বিভ্রাটের জেরে আসল অপরাধীর পরিবর্তে নিরপরাধীকে তুলে নিয়ে গেল পুলিশ। কেবল গ্রেফতার করেই ক্ষান্ত থাকেনি। একেবারে জেলে হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। এই ঘটনা মানবাধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে ধৃতের পরিবার। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ সুপার।

কী নিয়ে এই ভুল বোঝাবুঝি? ঘটনাটি পুরাতন মালদার ঈশ্বরগঞ্জ গ্রামের। গত ২৭ জুন, সোমবার ওই গ্রামের বাসিন্দা গোপাল মাহাতো নামের এক বৃদ্ধকে গ্রেফতার করে মালদা থানার পুলিশ। এরপরই ওই ব্যক্তির পরিবার অভিযোগ তোলে, একই নাম হওয়ায় আসল অভিযুক্তকে গ্রেফতার না করে নির্দোষ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃদ্ধের পরিবারের দাবি, আসল অভিযুক্ত দুর্গাপুরের বাসিন্দা। দু’জনের নামই এক হওয়ায় পুলিশ নির্দোষ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে।

জানা গিয়েছে, ২০০৫ সালে সংঘর্ষ ও ধর্ষণের একটি পুরনো মামলায় গ্রেফতারির পরোয়ানা জারি হয়েছিল গোপাল মাহাতো নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তিনি দুর্গাপুরের বাসিন্দা বলে জানিয়েছে পুলিশ। সেই মোতাবেক পুরাতন মালদা থানার কর্তব্যরত সিভিক ভলেন্টিয়ার গোপাল মাহাতোকে গ্রেফতার করেন। এরপর তাঁকে পেশ করা হয় আদালতে। আদালতের নির্দেশেই অভিযুক্তকে পাঠানো হয় সংশোধনাগারে। তখনও আসল বিষয়টি প্রকাশ্যে আসেনি। এরপরই নিরপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেফতারের অভিযোগ তুলে পুলিশের দ্বারস্থ হয় নির্দোষ গোপাল মাহাতোর পরিবার।

এদিন ভোটার পরিচয়পত্র, পঞ্চায়েতের শংসাপত্র সহ বাবার যাবতীয় নথিপত্র নিয়ে পুরাতন মালদা থানায় হাজির হন ছেলে অশোক মাহাতো। তিনি বলেন, “বিনা অপরাধে জেল খাটছে বাবা। আসল অপরাধী গোপাল মাহাতোকে না ধরে বাবাকে ধরে নিয়ে এসেছে পুরাতন মালদা থানার কয়েকজন সিভিক ভলেন্টিয়ার। পরে আদালতের মাধ্যমে জানতে পারি অন্য গোপাল মাহাতোর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। আর পুলিশ অন্যায়ভাবে আমার বৃদ্ধ বাবাকে ধরে নিয়ে এলো। এখন বাবাকে ছাড়ানোর জন্য প্রশাসনের দরজায় ঘুরছি।”

বৃদ্ধের পরিবার জানিয়েছেন, বাধ্য হয়ে তাঁরা মানবাধিকার কমিশন এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানানোর চিন্তাভাবনা করছেন। পুরো বিষয়টি নিয়ে মুখে একপ্রকার কুলুপ এঁটেছে মালদা থানার পুলিশ। পুলিশের ভুলে অকারণে সংশোধনাগারে দিন কাটাচ্ছে ঈশ্বরগঞ্জের গোপাল মাহাতো। তাঁর দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন গোটা পরিবার।

পুরো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের ভূমিকাকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি বিধায়ক গোপালচন্দ্র সাহা। নিজে মালদা থানায় উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি। এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “পুলিশের ভুলে একজন নিরাপরাধ মানুষ জেল খাটছেন। এই ঘটনাই প্রমাণ করছে, রাজ্যে এখন আর আইনের শাসন নেই। এ নিয়ে তথ্য প্রমাণ দিয়ে আমি মালদা থানার আইসি এবং ওয়ারেন্ট অফিসারের সঙ্গে কথা বললাম। গোপালবাবু দ্রুত মুক্তি না পেলে আমরা আন্দোলনে নামব।”

অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন মানবাধিকার কর্মী তথা মালদা জেলা আদালতের আইনজীবী মৃত্যুঞ্জয় দাস। বলেছেন, “মালদা থানার পুলিশ যা করেছে তা মানবাধিকার লঙ্ঘন। এটা পুরোপুরি বেআইনি কাজ। এর জন্য পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”