রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

‘স্যর বউকে খুন করে এসেছি, বডিটা ঘরেই পড়ে রয়েছে’! স্ত্রীকে মেরে আত্মসমর্পণ স্বামীর

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২২, ১০:২৫ পিএম | আপডেট: আগস্ট ১, ২০২২, ০৪:৩৩ এএম

‘স্যর বউকে খুন করে এসেছি, বডিটা ঘরেই পড়ে রয়েছে’! স্ত্রীকে মেরে আত্মসমর্পণ স্বামীর
‘স্যর বউকে খুন করে এসেছি, বডিটা ঘরেই পড়ে রয়েছে’! স্ত্রীকে মেরে আত্মসমর্পণ স্বামীর

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ স্ত্রীকে খুন করে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ স্বামীর। রাতের ডিউটি চলছিল, পুলিশের ভ্যান রাস্তার মোড়ের কাছে এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে পুলিশের কর্মীরা নেমে দাঁড়িয়েছিলেন, সাইকেল চড়ে এক ব্যক্তি এসে, সোজা কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিকের পায়ে পড়ে যায়। বলে, ‘স্যর আমি আমার বউকে খুন করে এসেছি। বডিটা এখনও ঘরেই পড়ে রয়েছে।’ ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ কর্মীরা ওই ব্যক্তির কথা শুনে হতবাক হয়ে যান। এরপর থানায় ফোন করে ঘটনার কথা ওসিকে জানানো হয়। এরপর ওসির নির্দেশেই ওই ব্যক্তিকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে ওই ব্যক্তির স্ত্রীর দেহ। 

রবিবার ভোরে পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানার পানোয়া গ্রামে এক ঘর থেকে বছর ২৯-এর মমতাজ খাতুন নামে এক গৃহবধূকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর তাঁকে ভাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই পুলিশ ওই মৃত গৃহবধূর স্বামী শেখ রহমতকে গ্রেফতার করেছে। ভাতার থানার ওসি অরুণ কুমার সোম জানিয়েছেন, শেখ রহমত নিজের স্ত্রীকে খুনের কথা স্বীকার করেছে। এই ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

জানা গিয়েছে, নিহত গৃহবধূর বাপের বাড়ি ভাতারের পানোয়া গ্রামের মাঝেরপাড়ায়। বেশ কয়েকবছর আগে কাটোয়ার গাঙ্গুলিডাঙা গ্রামের বাসিন্দা শেখ রহমতের বিয়ে হয়েছিল নিহত গৃহবধূ মমতাজ খাতুনের। মমতাজ ও শেখ রহমতের দুই মেয়েও রয়েছে। বড় মেয়ের বয়স ৯ বছর। জানা গিয়েছে, শেখ রহমত পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। বিয়ের বছরখানেকের মধ্যেই গাঙ্গুলিডাঙা ছেড়ে শ্বশুরবাড়ির গ্রামে বসবাস শুরু করেন শেখ রহমত। মমতাজের বাবা অর্থাৎ শেখ রহমতের শ্বশুর শেখ মোমিন জানিয়েছেন, তাঁর বাড়ির পাশেই মেয়ে-জামাইকে থাকার জন্য জায়গা দিয়েছিলেন তিনি। ঘরও করে দেন। শেখ মোমিন আরও জানিয়েছেন, ‘মেয়ের সঙ্গে জামাইয়ের মাঝেমধ্যে বাড়ির কাজকর্ম নিয়ে অশান্তি হত। আবার মিটেও যেত। তাই স্বামী-স্ত্রীর অশান্তিতে নাক গলাতাম না। কিন্তু এভাবে খুন করতে পারে স্বপ্নেও ভাবিনি।’

অন্যদিকে, পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পানোয়া গ্রামের থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে আলিনগর চৌরাস্তার মোড়ের কাছে এদিন খুব ভোরে পুলিশের টহলদারি ভ্যান দাঁড়িয়েছিল। গাড়ির পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিক এবং পুলিশের অন্যান্য কর্মীরা। সেই সময় এক ব্যক্তি সাইকেল চড়ে ভাতার বাজারের দিকে আসছিল। কিন্তু পুলিশের ভ্যান দেখেই, সাইকেল থেকে নেমে পুলিশ আধিকারিকের পা জড়িয়ে ধরে ওই ব্যক্তি। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই, পুলিশ জানতে পারে যে, তাঁর নাম শেখ রহমত। সে পুলিশকে জানায় যে, নিজের স্ত্রী মমতাজ খাতুন ও দুই মেয়ে যখন ঘুমিয়ে পড়ে, তখন স্ত্রীর গলায় ওড়না জড়িয়ে ফাঁস দিয়ে সজোরে চেপে ধরে সে। এর জেরেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে মমতাজ। এরপর তাঁর মাথায় একটি শাবল দিয়ে বার বার আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে শেখ রহমত। 

কিন্তু কেন নিজের স্ত্রীকে নৃশংসভাবে খুন করল রহমত? এর জবাবে পুলিশি জেরায় সে জানিয়েছে যে, ‘সময়ে রান্না করত না। আমাকে কাজ করে বাড়িতে গিয়ে প্রায়দিনই রান্না করতে হত। কোনও দায়িত্বপালন করত না।’ এদিকে, রহমতের প্রতিবেশীদের দাবি, লটারির টিকিট কাটার নেশা ছিল। বাজারে অনেক টাকা ধার হয়ে গিয়েছিল। তাই নিয়েও দুজনের মধ্যে প্রায়ই অশান্তি হত। সেই অশান্তি থেকেও এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে প্রতিবেশীদের দাবি।