গাছ, মানব জীবনের ধারক এবং বাহক। মানুষের জীবন যাপনের ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি যে জিনিসটার উপর নির্ভর করতে হয় সেটা হল গাছ। কিন্তু কতজন মানুষ গাছের যত্ন নেন? বর্তমানে বড় বড় বাসস্থান গড়ে তোলার জন্য নির্দ্বিধায় কেটে ফেলা হচ্ছে গাছ, সাফ হচ্ছে ঘন জঙ্গল। কিন্তু আদৌ কী রোপণ হচ্ছে পর্যাপ্ত গাছ?
তবে এবার দেউচা পঁচামি দেখালো সদিচ্ছা থাকলে গাছ না কেটেও গাছ রক্ষা করা সম্ভব। আর এই ঘটনা নিতান্তই প্রশংসনীয় বটে। ওই এলাকায় মানুষের মতো পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে গাছের। বলেনটা কি গাছেদের আবার পুনর্বাসন? গাছ কি নড়াচড়া করতে পারে নাকি? তা না পাড়লেও মানুষ এবার প্রযুক্তির সাহায্যে সেটাই করে দেখালো।
শুক্রবার গাছ বিশেষজ্ঞ এবং জেলাশাসকের উপস্থিতি চাঁদা মৌজার খনন এলাকা থেকে একটি পূর্ণবয়স্ক মহুয়া গাছকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে পুনর্বাসন দেওয়া হল এক কিলোমিটার দূরে। এর আগে প্রযুক্তির সাহায্যে ঘর, বাড়ি তুলে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনার কথা আমরা শুনে থাকলেও গাছ সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বোধহয় এই প্রথম!
গাছ না কেটে পরিবেশের ক্ষতি না করে, এই কর্মকাণ্ড উন্মোচন করল এক নতুন দিগন্তের। দেউচার খনি এলাকায় শুরু হয়েছে প্রথম পর্যায়ে খননকার্য। চলছে কয়লা তোলার কাজ। ইতিমধ্যেই চাঁদা মৌজায় ১২ একর সরকারি জমিতে গত সপ্তাহ থেকে চলছে খননকার্য। আর তাই সরাতে হবে গাছ। কিন্তু না কেটে উপায় কী? আর সেই উপায়ই হল পুনর্বাসন।
মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন গাছ যেন না কাটা হয়। আর ওই এলাকাতেই রয়েছে অর্জুন, শিরিষ মহুয়া সহ ১৮০ টি গাছ। আর তাই গাছ না কাটার পরিবর্তে পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আর পুনর্বাসনের পর প্রয়োজন প্রতিস্থাপন। সেই জন্য নিয়োগ করা হয়, গাছ প্রতিস্থাপন বিশেষজ্ঞ রামচন্দ্র আপারি ও দেশ-বিদেশের গাছ বিশেষজ্ঞ শিশির কুমার মিত্রকে।
এই কর্মকাণ্ডের দুদিন আগে থেকে সব গাছের গোড়ায় জল দেওয়া শুরু হয়।এরপর বৃহস্পতিবার কাটা হয় গাছের ৭৫ ভাগ শিকড়। তবে কাটলেই তো হল না। শিকড় গজানোরও বন্দোবস্ত করতে হবে। তাই দেওয়া হয় প্যারাব্যানজানিক হাইড্রক্সি অ্যাসিড ও ইনডোল অ্যাসিড। এরপর গাছগুলিকে স্থানান্তরিত করে এক কিলোমিটার দূরে পুনর্বাসন দেওয়া হয়।