জন্ম থেকেই কার্যত ছোট দুই হাত৷ কাঁধের উপর থেকে নেমেই শেষ হয়ে গিয়েছে৷ নেই দু’হাতের আঙুলও। ছেলেবেলা থেকে পা দিয়ে লিখে লিখেই পেরিয়েছেন পড়াশোনার গণ্ডী। কিন্তু তাতে কী! মানসিক জোর তাঁর প্রবল৷ আর সেই মানসিক জোরেই গত পঁচিশ বছর ধরে চাকদহের ডুয়ার বাগান মাঠে খোখো শেখাচ্ছেন জগবন্ধু মণ্ডল৷
বাড়ি নদীয়ার চাকদহ থানার দোয়ারডাঙ্গা এলাকায়। বয়স ইতিমধ্যেই ৫০ পেরিয়েছে। তবুও নিয়মিত খোখো খেলার প্রশিক্ষণ দিতে মাঠে নামেন তিনি। অপরিণত দুই হাতেই তুলে নেন বাঁশি। মাঠে ছুটে খেলা শেখান উৎসাহী ছেলে-মেয়েদের। প্রতিদিন বিকেল হলেই বিনা পারিশ্রমিকে নিজের অর্থ ব্যয় করে টিফিন খাইয়ে প্রায় শতাধিক ছেলেমেয়েদের খোখো খেলার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন জগবন্ধু মণ্ডল।
যে সময় তিনি মাধ্যমিক দিচ্ছেন সেই সময় খোখো খেলার কর্মশিক্ষা পরীক্ষায় যোগ দিয়েছিলেন জগবন্ধু বাবু৷ তা থেকেই পেয়েছেন অনুপ্রেরণা। এর আগেও তিনি ফুটবল খেলতেন, পাশাপাশি টিমও তৈরি করেছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে অনেকেই ছেড়ে চলে যাওয়ায় তাঁর মন ভেঙে যায়। এরপরই খোখো খেলার দিকে নজর দেন তিনি।
তাঁর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে আজ বহু ছেলে-মেয়েই চাকরির সুযোগ পেয়েছেন। অনেকে আবার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে বহু পুরস্কার জিতে নিয়েছে। ভারতের বহু প্রাচীন এই খেলাকে ফের পুনরূদ্ধার করার জন্য ক্রীড়া দপ্তরে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেন তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র৷ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের অ্যাডহক স্টাফদের সঙ্গে কাজ করেন তিনি। তবে মাস মাইনে খুবই সামান্য।
চাকদহ স্টেশনে নেমে জগবন্ধু বাবুর কথা বললে অনেকেই তাঁকে চিনতে পারেন৷ গত পঁচিশ বছরে প্রায় দশবার রাজ্য খোখো টিমকে জাতীয় প্রতিযোগিতায় নিয়ে গিয়েছেন তিনি৷ আটবার চ্যাম্পিয়ন করে নিয়েও ফিরেছেন। নদীয়ার অ্যাথলেটিক সীমা বিশ্বাসের সহযোগিতায় ২০১৭ সালে রাজ্য সরকার কর্তৃক প্রদত্ত `ক্রীড়াগুরু` সম্মানও পান জগবন্ধু বাবু৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং তাঁর হাতে তুলে দেন সেই পুরস্কার। বর্তমানে নদীয়ার গণ্ডি পার হয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খোখো খেলা শেখানোর জন্য বহু অনুরোধ আসছে তাঁর কাছে। জগবন্ধু বাবুর কথায় এটাই তাঁর কাছে সফলতা।
আপনার মতামত লিখুন :