শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

স্মরণে জ্যোতি বসু, জন্মদিনে রইল শ্রদ্ধার্ঘ্য!

১২:১৫ পিএম, জুলাই ৮, ২০২১

স্মরণে জ্যোতি বসু, জন্মদিনে রইল শ্রদ্ধার্ঘ্য!

উপমহাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলন তথা ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম বর্ণময় চরিত্র জ্যোতি বসু। দেশের প্রখ্যাত বাম রাজনীতিক ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর আজ ১০৭তম জন্মদিবস। ১৯১৪ সালের ৮ জুলাই, আজকের দিনেই কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি৷ তবে তাঁর শৈশবের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছিল বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার বারদী চৌধুরীপাড়া গ্রামে। সেখানেই ছিল তাঁর পৈতৃকভিটে। ভারতের পাশাপাশি ওপার বাংলার রাজনীতির ইতিহাসেও অন্যতম ছাপ ছিল এই প্রখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের। আজ তাঁর জন্মদিনে রইল শ্রদ্ধার্ঘ্য...

তাঁর প্রকৃত নাম ছিল জ্যোতিরিন্দ্র বসু, ডাক নাম ছিল গনা। স্কুলে ভর্তির সময় তাঁর বাবা নামটিকে ছোট করে 'জ্যোতি' করে দেন। সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল থেকে সিনিয়র কেমব্রিজ (নবম শ্রেণি) পাশ করেন তিনি। এরপর ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে সাম্মানিক (অনার্স) সহ প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন তিনি। জ্যোতি বসু স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৩৫ সালে। এরপর আইন বিষয়ে উচ্চশিক্ষার্থে তিনি যুক্তরাজ্যে গমন করেন। এই সময় পিতার ইচ্ছায় ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষাতেও অবতীর্ণ হন তিনি। তবে উত্তীর্ণ হতে পারেননি। লন্ডনের মিডল টেম্পল থেকে ব্যরিস্টারি পাস করে ১৯৪০ সালে কলকাতায় ফিরে আসেন তিনি। এসেই তিনি যুক্ত হন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে।

১৯৪৬ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে, অবিভক্ত বাংলার শেষ প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন জ্যোতি বসু। এই সময় থেকেই আইনসভায় বিরোধী নেতার ভূমিকা পালন করতে থাকেন বসু। শোনা যায়, বিরোধী দল নেতা হওয়ার আগে একটা সময়ে জ্যোতি বসু ছিলেন বিধানসভার এক সাধারণ সদস্য। বেতন পেতেন মাসে ২৫০ টাকা। সেটারও বেশীরভাগ অংশ তিনি পার্টির কাজে দিয়ে দিতেন। পরে যখন জ্যোতি বসু বিরোধী দলনেতা হলেন, তখন অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছিল। তাঁর বেতন বেড়ে হয়েছিল মাসে ৭৫০ টাকা। স্বাধীনতার পূর্বে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, তেভাগা আন্দোলন ও বঙ্গবিভাগ নিয়ে আইনসভায় বিভিন্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৬৭ ও ১৯৬৯ সালে জ্যোতি বসু ইউনাইটেড ফ্রন্ট সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের আদি-অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন জ্যোতি বসু। তিনি ও তার দল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন।

১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বামপন্থীরা বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৭ সালের ২১ জুন প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন জ্যোতি বসু। ২০০০ সালের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩ বছর সাফল্যের সঙ্গে একটানা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পাশাপাশি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির জন্মলগ্ন ১৯৬৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পলিটব্যুরোর সদস্যও ছিলেন এই বাম নেতা। ১৯৯৬ সালে তাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ গ্রহণে অস্বীকার করেন তিনি।

২০০০ সালের ২৮ জুলাই সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক চলাকালীন হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন জ্যোতি বসু। তাকে প্রথমে ভর্তি করা হয় রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে; পরে নিয়ে যাওয়া হয় অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসে। একটু সুস্থ হলে স্বাস্থ্যগত কারণে ৬ নভেম্বর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের অন্যতম সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কাছে তিনি দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। এই মহান রাজনীতিবিদের মৃত্যু হয় ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি।

ওপার বাংলার সঙ্গে গভীর সদ্ভাব থাকার দরুন, জ্যোতি বসুর মৃত্যুর পর ২০১১ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ও জানিয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে আহ্বায়ক করে বাংলাদেশে ২০১ সদস্যবিশিষ্ট 'কমরেড জ্যোতি বসু স্মরণে নাগরিক পর্ষদ'ও গঠন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জ্যোতি বসুর শাসনকাল ছিল সাফল্য ও ব্যর্থতায় মিশ্রিত। তবে একথা অস্বীকার করার জায়গা নেই যে, তিনি ছিলেন এক অবিসংবাদী জননেতা ও এক বিশিষ্ট সম্মানের অধিকারী। এই মহান ব্যক্তিত্বের জন্মদিনে তাঁকে জানাই প্রণাম।