বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর মতভেদ রয়েছে। কোন রাখঢাক না রেখেই সেকথা স্বীকার করে নিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, পাশাপাশি একথাও স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, মতপার্থক্য থাকলেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তাঁর নেত্রী। এ বিষয়ে কোনও দ্বিমত নেই।
রবিবার একটি বাংলা টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিষেকের রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত জীবনের নানা দিক উঠে আসে। সেখানেই ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জানিয়ে দেন যে, নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্য থাকলেও, দিদিই তাঁর অনুপ্রেরণা। দিদিই তাঁর নেত্রী। তাঁর দর্শানো পথ অনুসরণ করেই এগিয়ে যাবেন তিনি এবং দল তৃণমূল কংগ্রেস। তাই দলীয় অন্তর্কলহের কোনও প্রশ্নই উঠছে না। তিনি যে দলের একজন কর্মী হিসেবেই কাজ করতে চান, তাও বারবার মনে করিয়ে দেন।
সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছিল যে, সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংঘাতের বিষয়টি। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, নেত্রী হিসেবে তিনি শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই মানেন। যদিও বিষয়টি বেশিদূর গড়াতে দেননি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বিতর্কের আগুনে জল ঢেলে অভিষেক আগেই বলেছিলেন, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তিনিও দিদিকেই নেত্রী মানেন। রবিবারের সাক্ষাৎকারে সেই বিষয়টিও উঠে আসে। ‘শিড়দাঁড়ার তফাতে’র প্রসঙ্গ টেনে আইনজীবী কল্যাণকে অভিষেকের বার্তা, ‘মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে শিরদাঁড়া সোজা করে কাজ করতে হবে।’
অন্যদিকে, এদিন ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ প্রসঙ্গেও মুখ খোলেন অভিষেক। তিনি বলেন, এই ভাবনা খোদ মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁরও মনে হয় এমনটাই হওয়া উচিত। তৃণমূল এক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ কাজ করতে পেরেছে। আগামীদিনে পুরোটাই হবে। তিনি প্রসঙ্গে বলেন যে, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ছাড়া প্রত্যেকে একটি করেই পদ পাবেন। সেদিকেই এগোচ্ছে দল। দলনেত্রী চাইলে একদিন পুরোপুরি তা বাস্তবায়িত হবে।
আবার করোনা আবহে দারুণ প্রশংসিত হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডায়মন্ড হারবার মডেল। সংক্রমণ রুখতে নিজের লোকসভা কেন্দ্রে করোনা পরীক্ষার উপর জোর দিয়ে তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এই প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, ‘ওই এলাকার সাংসদ হিসেবে আমার মনে হয়েছে এই বিষয়টার উপর জোর দেওয়া জরুরি, তাই করেছি। পার্টি আর সরকারকে গুলিয়ে ফেললে হবে না।’
এখানেই শেষ নয়, তাঁর সাক্ষাৎকারে তিনি সিপিএম এবং কংগ্রেসকে খোঁচা দিতেও ছাড়েননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই দুটো দল নিজেদের বদলাতে পারেনি। তাই ওরা ব্যর্থ। নির্বাচন এলেই রাস্তায় বেরোয়। কংগ্রেসের ব্যর্থতার জেরেই গোয়া, মেঘালয়ে আজ পৌঁছে গিয়েছে তৃণমূল বলেও মত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পাশাপাশি পরিবারতন্ত্র নিয়ে বিজেপিকে বিঁধতে ছাড়েননি তিনি। বলেন, ‘বিজেপি পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ করে, তারা নিজেদের দিকে তাকাক।’ তবে, যারা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপির হাত ধরেছে তাঁদের জন্য কি ভবিষ্যতে শাসকদলের দরজা খোলা? উত্তর অভিষেক বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি দুঃসময়ে যাঁরা তৃণমূল ছেড়ে গিয়েছেন, এটা ভেবে যে দল হেরে যাবে, তাঁদের জন্য দরজা বন্ধই রাখা উচিত। আর এলে প্রায়শ্চিত্ত করিয়ে দলে নেওয়া উচিত।’ তাঁর আরও বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদার বলেই, গেরুয়া শিবির থেকে তৃণমূলে ফেরা সব্যসাচী দত্ত পুরসভা ভোটে টিকিট পেয়েছেন।
এছাড়া দলের সেকেন্ড হাইকমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একাধিকবার কয়লা, গরু, বালি চুরি-সহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। এ ব্যাপারে নিজের আগের অবস্থানে থেকে তিনি স্পষ্ট বলেন যে, ‘আবারও বলছি আমার বিরুদ্ধে যদি কোনও প্রমাণ থাকে, জনসমক্ষে আনুন। ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুবরণ করব।’
আপনার মতামত লিখুন :