বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ রামপুরহাটের বগটুই কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে তৃণমূল নেতা তথা স্থানীয় ব্লক তৃণমূল সভাপতি আনারুল হোসেনের। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ আনারুলের নেতৃত্বেই বগটুই গ্রামের ওই বাড়িগুলিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এদিন কথামতো বগটুই গ্রামে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বগটুই কাণ্ডে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের কথা শোনেন। সেদিন রাতে ঠিক কী ঘটেছিল, কারা ঘটিয়েছিল এই ঘটনা? সব অভিযোগ শোনেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন ওখানে দাঁড়িয়ে, মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তৃণমূলের এক নম্বর ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তোলেন নিহতদের পরিবারের লোকেরা। তাঁদের অভিযোগ, আনারুলের নির্দেশেই আগুন লাগানো হয়েছিল সেদিন। এবার সেই আনারুলকেই দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন মুখ্যমন্ত্রী কড়া হুশিয়ারের সুরে বলেন যে, এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কাউকেই রেয়াত করা হবে না। মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশের কয়েক ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই গ্রেফতার হলেন আনারুল হোসেন। তারাপীঠের একটি হোটেলের সামনে থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
কে এই আনারুল হোসেন? তৃণমূলের লোক হলেও, এদিন তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বীরভূম জেলার রামপুরহাট শহর সংলগ্ন সন্ধিপুর এলাকার বাসিন্দা বছর বাহান্নর আনারুল হোসেন। এক সময় এই আনারুল হোসেন রাজমিস্ত্রির পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই সময় অবশ্য তিনি কংগ্রেসের সমর্থক ছিলেন। এরপর তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি হওয়ার পর কংগ্রেস ত্যাগ করে এই আনারুল হোসেন তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন।
রাজনীতির ময়দানে পা রেখে, ধীরে ধীরে বীরভূমের মাটিতে দক্ষ সংগঠক হিসাবে ধীরে ধীরে খ্যাতি অর্জন করেন। সেই সূত্রেই ক্রমশ রামপুরহাটের বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও বিধানসভার বর্তমান ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন তিনি। শুধু তাই নয়, তিনি বীরভূমের তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলেরও কাছাকাছি চলে আসেন। দক্ষ সংগঠক হিসেবে এতোই ক্ষমতা ছিল তাঁর যে, গোটা বগটুই গ্রাম ছিল তাঁর আয়ত্তেই। বীরভূমের তৃণমূলের একটা বড় অংশের বক্তব্য, আনারুল নিজের এলাকায় অপ্রতিরোধ্য এবং দাপুটে নেতা। বর্তমানে রামপুরহাটের রামরামপুরে রয়েছে তাঁর বিশাল বাড়ি। এই বাড়ি হয়েছে তৃণমূলের আমলেই।
প্রসঙ্গত রামপুরহাটে বরশাল পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান ভাদু শেখ খুন এবং তারপরই আগুনে পুড়ে কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনায় শুরু থেকেই আনারুল হোসেনের নাম জড়িয়েছে। যারা আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছেন, তাঁদের আত্মীয়দের দাবি, তৃণমূলের ব্লক সভাপতি হওয়ার কারণে প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রয়েছে আনারুলের। তাঁরা আরও জানিয়েছেন যে, অনেকেই প্রাণ বাঁচানোর অনুরোধ করে ফোন করলেও, তাতে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেননি আনারুল হোসেন। পুলিশকেও সাহায্য করতে দেননি। এর পিছনে আনারুলের কী স্বার্থ রয়েছে, আনারুলের কী উদ্দেশ্য ছিল সবই খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিন বগটুই গ্রামে পৌঁছে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আনারুল আমাদের ব্লক প্রেসিডেন্ট। কিন্তু, ওঁরা তার কাছে অভিযোগ করেছিল। কেন তা সত্ত্বেও পুলিশ পাঠায়নি তা জানা দরকার। ওকে গ্রেফতার করা হবে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘অবিলম্বে আনারুলকে গ্রেফতার করতে হবে। হয় আনারুল আত্মসমর্পণ করুক, কিংবা যেখান থেকে হোক ওকে গ্রেফতার করা হোক।’ এর কয়েক ঘণ্টা পরেই আনারুলকে গ্রেফতার করা হয়।
আজ মুখ্যমন্ত্রী বগটুই গ্রামে পৌঁছে বলেন, ‘দোষীদের কড়া শাস্তি দিতে হবে। পুলিশকেও দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। তদন্ত তদন্তের পথে চলবে। আমি কোনওভাবে হস্তক্ষেপ করব না। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যে পুলিশ অফিসার জড়িত, তাঁদেরও ছাড়া হবে না।
অন্যদিকে, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই আনারুল হোসেন ঠিক কী জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যমে গ্রেফতারের আগে? আনারুল বলেছেন, গ্রামবাসীরা মিথ্যে অভিযোগ করছে তাঁর বিরুদ্ধে। যদিও আনারুল তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। উপপ্রধানের মারা যাওয়ার খবর পেয়ে আমি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। হাসপাতাল থেকে থানায় এসেছি। সিসিটিভিতে তার প্রমাণ আছে। কেউ দেখাক আমি ওই সময় গ্রামে গিয়েছিলাম।’
এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও বলেছেন যে, ‘আমি এখন আর কিছু মন্তব্য করছি না। আমি জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলব। ডেপুটি এসপি-র সঙ্গে কথা বলব। মুখ্যমন্ত্রী যখন বলে দিয়েছেন, আমি আমাদের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলব। আমি তো ছিলাম না ওখানে। আমার বাড়ি সন্ধিপুর, আর এটা নিশ্চিন্তপুর, অনেক দূর। ঘটনার সময় আমি হাসপাতালে ছিলাম। আমরা রাজনীতি করি, মানুষের সঙ্গে এরকম ব্যবহারে বিশ্বাস করি না।’
আপনার মতামত লিখুন :