নিজস্ব প্রতিবেদনঃ ইতিমধ্যেই বর্ধমানে মদ খেয়ে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তথা কলেজ মোড় এলাকার ওই মদের দোকানের মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার ৬ দিনের মাথায় মঙ্গলবার সকালেই মূল অভিযুক্ত হোটেল মালিক গণেশ পাসওয়ানকে গ্রেফতার করল বর্ধমান থানার পুলিশ। ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে জেলা খাদ্য সুরক্ষা দফতর। সোমবারই খাদ্য সুরক্ষা দফতরের ২ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল ওই হোটেল ঘুরে দেখেন। পাশাপাশি আবগারি দফতরের পক্ষ থেকেও শুরু হয়েছে তদন্ত। এই পরিস্থিতিতে মদ কাণ্ডে তদন্তে নামল ফরেন্সিক দল।
এদিন ২ সদস্যের ফরেন্সিক দল কলেজ মোড়ের তারা মা হোটেলে এসে নমুনা সংগ্রহ করে। এই হোটেল থেকেই মদ খেয়ে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এদিনই তারা মা হোটেল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ফরেন্সিক টিম। এদিন ফরেন্সিক টিমে ছিলেন ডিএসসি (হেড কোয়ার্টার) অতনু ঘোষাল, বর্ধমান থানার আইসি সুখময় চক্রবর্তী। হোটেলের ভিতরে ঢুকে প্রায় আধ ঘন্টা ধরে নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেন্সিক দল।
এদিন ডঃ দেবাশীষ সাহা, স্টেট ফরেনসিক টিমের বিশেষজ্ঞ জানান যে, এদিন শুধু নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এরপর সেই নমুনা পরীক্ষাগারে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। তার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়। কলেজ মোড়ের পর, এদিন ফরেন্সিক দলের সদস্যরা বড়বাজার এলাকার হোটেলে গিয়েও নমুনা সংগ্রহ করেন।
মঙ্গলবার তারা মা হোটেলের মালিক গণেশ পাসওয়ানকে গ্রেফতার করে বর্ধমান থানার পুলিশ। উল্লেখ্য, এই হোটেলের মদ খেয়েই বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। পরে তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের মৃত্যুও হয়। ধৃত গণেশের বিরুদ্ধে ৩০২, ৩১৮, ২৭২,১২০ (বি) ধারায় মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে খুন, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও বিষক্রিয়াজনিত ধারা।
পুলিশ সূত্রে খবর, বর্ধমান কলেজ মোড় এলাকায় তারা মা নামক হোটেলে মদ খেয়েই একসঙ্গে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর থেকে গত কয়েকদিনে মোট ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই হোটেলে মদ খেয়েই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলেই অভিযোগ। যদিও মদেই সকলের মৃত্যু হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে পুলিশ এখনও কিছু নিশ্চিত করেনি। তবে, হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, এই ঘটনায় গোটা বর্ধমান শহর জুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে জেলা খাদ্য সুরক্ষা দফতর। গত সোমবারই খাদ্য সুরক্ষা দফতরের ২ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল ওই হোটেল ঘুরে দেখেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা প্রথমে প্রকাশ্যে আসে গত বৃহস্পতিবার রাতে। বর্ধমান শহরের বাহির সর্বমঙ্গলা পাড়ার পাঁচজন যুবক একসঙ্গে অসুস্থ হয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। তাঁদের মধ্যে প্রথমে শেখ সুবরতি ও শেখ হালিম নামে দুই ব্যক্তি মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর সামনে আসে। এই দুজনের মধ্যে শেখ সুবরতিকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর শেখ হালিমের চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয়। তারপর একের পর এক মৃত্যুর খবর আসতে থাকে।
এখনও পর্যন্ত মদ খেয়ে মোট ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এঁরা সকলেই কলেজ মোড় এলাকায় ওই হোটেল থেকে বৃহস্পতিবার মদ খেয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় একের পর এক মৃতের সংখ্যা বাড়তেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। বেআইনি মদের কারবার রুখতে এরপর অভিযান শুরু করে পুলিশ। গত শনিবারই পুলিশ অনেকেই গ্রেফতার করে। সেই সঙ্গে বেআইনি বহু দেশি ও বিদেশি মদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তবে, মদে বিষক্রিয়ার দাবি উড়িয়ে দিয়েছে আবগারি দফতর। আবগারি দফতরের দাবি, মদের নমুনায় পরীক্ষাগারে কোনও অসঙ্গতি পাওয়া যায়নি। সরকারি লেভেল লাগানো মদ পাওয়া গিয়েছে। তাহলে কি হোটেলের সরকারি লেভেল লাগানো মদ খেয়েই মৃত্যু হচ্ছে? ইতিমধ্যেই এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :