নিজস্ব প্রতিনিধি, নদিয়াঃ ৬-৭ মাস আগেও তিনি বেঁচে ছিলেন। মেয়ের সঙ্গে থাকতেন। তারপর কয়েক মাস কেটে গিয়েছে। এই সময়টায় কী হয়েছে, কেউ যানে না। কোনও আত্মীয়স্বজন খোঁজ নিতে এলে, মেয়ে দোলা বলতেন, মা বাড়িতে নেই, কলকাতায় গিয়েছেন। আবার কখনও কাউকে কাউকে বলতেন মা অসুস্থ। ঠিক কী ঘটেছে কেউ সঠিক জানেন না। শনিবার প্রকাশ্যে এল আসল ঘটনা। ঘর থেকে উদ্ধার হল বৃদ্ধার কঙ্কাল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুমুল চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে নদিয়ার ধুবুলিয়ায়।
জানা গিয়েছে, মৃতের নাম মন্দিরা দাস। ধুবুলিয়া বাজারে পুরনো বাড়িতে আলাদা ঘরে মেয়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। শনিবার এক আত্মীয়া দোলার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তাঁর মা মন্দিরার খোঁজ করেন। প্রথমে একই উত্তর দেয় দোলা। দিনের পর দিন বৃদ্ধা বাড়িতে নেই, একথা শুনে সন্দেহ হয় ওই আত্মীয়ার। তিনি জোর করে ঘরে ঢুকেই আঁতকে ওঠেন। দেখেন, কঙ্কাল পড়ে রয়েছে। এরপর পুলিশে খবর গেলে, পুলিশ এসে কঙ্কাল উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ঠিক কতদিন আগে মৃত্যু হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
নদিয়ার ধুবুলিয়ার ঘটনা। মৃত মহিলার নাম মন্দিরা দাস। বয়স আনুমানিক ৫৬ বছর। ৬-৭ মাস আগে শেষবার ওই বৃদ্ধাকে দেখা গিয়েছিল বলে প্রতিবেশীদের দাবি। তাঁদের এও দাবি, মেয়ে দোলা মানসিকভাবে সুস্থ নন। বাড়ির দরজা সবসময় বন্ধ থাকত। মায়ের মৃত্যুর পর, তাঁর মৃতদেহের সঙ্গে একই বাড়িতে বসবাস করতেন বলে জানা গিয়েছে। এমনকি মায়ের মৃত্যুর খবর পাড়া-প্রতিবেশী বা আত্মীয়দের কাউকেই জানাননি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। পুলিশ গোটা এলাকা ঘিরে রেখেছে।
পুলিশের অনুমান, প্রায় ৬ মাস ধরে মৃতদেহ আগলে রেখেছিলেন মেয়ে। শনিবার সন্ধ্যায় মৃতার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে খবর পেয়ে, কঙ্কাল উদ্ধার করে নিয়ে যায়, ধুবুলিয়া থানার পুলিশ। অভিযোগ, মেয়ে দোলা তাঁর মায়ের মৃত্যুর খবর কাউকে জানাতে চাননি। প্রতিবেশীরা তাঁকে মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বলতেন, কলকাতায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ধুবুলিয়া থানার পুলিশ।
জানা গিয়েছে, এলাকায় একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে অফিসে পরিচারিকার কাজ করতেন দোলা। মায়ের দেহ বাড়িতে রেখেই কাজ করতে যেতেন। কাজ ছাড়া অন্য কোথাও বেরতেন না, কারও সাথে মিশতেনও না। সবসময় বন্ধ রাখতেন দরজা-জানলা।
এদিকে, এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর, দোলা জানিয়েছেন, মাকে দুধ গরম করে খেতে দিতেন তিনি। তারপর কবে মায়ের মৃত্যু হয়েছে তা নাকি তিনি জানতেন না। এখানেই শেষ নয়, দোলা বলেন, মা ওই ঘরে শুয়ে বলেছিল, আমি সুস্থ হয়ে ঠিক উঠে আসব। মৃত্যু হলেও যাতে কাউকে জানানো না হয়, সেই পরামর্শই দিয়েছিলেন তাঁর মা। মেয়ের আরও দাবি, মা তাঁকে সাবধান করে বলেছিলেন, মৃত্যুর খবর পেলে সবাই লুঠেপুটে খাবে, তাই কাউকে জানানোর প্রয়োজন নেই। তবে কী কারণে মায়ের দেহ এ ভাবে বাড়িতে ফেলে রাখলেন তিনি, তা স্পষ্ট নয়।
আপনার মতামত লিখুন :