নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমানঃ অবশেষে তাঁর চলার পথের সব প্রতিবন্ধকতা দূরে সরিয়ে কাজে যোগ দিলেন বর্ধমানের নির্যাতিতা রেণু খাতুন। এদিন তিনি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য দফতরে গিয়ে স্টাফ নার্স গ্রেড ২ পদে যোগ দিলেন। যোগ দেওয়ার পরেই তাঁকে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা সংবর্ধনা জানান। এরপরই রেণু জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক প্রণব রায়ের কাছ থেকে তাঁর দায়িত্বভার বুঝে নেন।
এদিন নার্সের কাজে যোগ দিয়েই রেণু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে রেণু খাতুন এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন। নিজের কাজ তিনি নিষ্ঠার সঙ্গেই করবেন বলেও জানিয়েছেন। জানা গিয়েছে যে, স্বাস্থ্যভবন থেকে কোনও নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আপাতত রেণু খাতুন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য দফতরেই কর্মরত থাকবেন। এমনটাই এদিন জানিয়েছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক প্রণব রায়।
অনেক ঝড়-ঝাপটা সামলে কেতুগ্রামের রেণু খাতুন আজ এই জায়গায় পৌঁছেছেন। কিন্তু কিছুদিন আগেই তাঁর জীবনের উপর দিয়ে বড় ঝড় বয়ে গিয়েছে। স্বামী ষড়যন্ত্র করে রেণুর ডান হাতের কব্জি কেটে নিয়েছে। তাও নিজের লক্ষ্যে অবিচল রেণু। জীবন যে থেমে থাকবে না, তাই থেমে গেলে হবে না। ডান হাত কাটা গিয়েছে তো কি, বাঁ হাত দিয়েই শুরু করেছেন সব কাজ।
প্রসঙ্গত ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের চিনিসপুর গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল হকের মেয়ে রেণু ভালোবাসা করে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন কোজলসার সরিফুল শেখের সঙ্গে। রেণু নার্সিং-এর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। একাধিক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করার পর তিনি সম্প্রতি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে নার্সের পদে চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। সেই চাকরিতেই তাঁর যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্বামীর ছিল তাতে প্রবল আপত্তি। স্বামীর ধারণা ছিল, রেণু সরকারি চাকরি পেলে, তাঁকে ছেড়ে চলে যাবে। রেণুর অনেক বোঝানোতেও কোনও লাভ হয়নি।
স্ত্রীকে আটকাতে অবশেষে তাঁর ডান হাতের কব্জি কেটে নেয় স্বামী। ঘটনাটি ঘটে চলতি মাসের ৪ তারিখ। ওই ঘটনার পরের দিন ৫ জুন এনিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন রেণুর বাবা আজিজুল হক। অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযুক্ত স্বামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই ঘটনায় তার সঙ্গীদেরও গ্রেফতার করা হয়। প্রত্যেকেই এখন পুলিশের হেফাজতে।
এদিকে, রেণু লড়াইয়ের ময়দান ছাড়েননি। সেই সঙ্গে স্বামী ও অন্যান্য দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিও জানান। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই বাঁ হাত দিয়ে লেখা শুরু করেন। লড়াইয়ে পাশে পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য মহিলা কমিশনকে। এদিন তাই যখন সরকারি নার্সের কাজে যোগ দিলেন তখন মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি।
আপনার মতামত লিখুন :