বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ বীরভূমের রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এবার রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চাইল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। মঙ্গলবার এমনটাই দাবি করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকে।
রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের প্রয়োজন মনে করছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তাই এই দাবি নিয়ে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁদের এই বৈঠকের পরই রাজ্য সরকারের কাছে রামপুরহাট কাণ্ডে রিপোর্ট তলব করেছেন অমিত শাহ। রামপুরহাটের ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ বলে দাবি করেছেন সুকান্ত মজুমদার। এদিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন দিলীপ ঘোষ, অর্জুন সিং প্রমুখ। এখানেই শেষ নয়, সুকান্ত মজুমদার এও দাবি করেছেন যে, রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলও পাঠাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তিনি জানিয়েছেন যে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যাতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়, তার জন্য তিনি আর্জি জানিয়েছেন। যদিও এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
এদিন সংসদ ভবনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতরে অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেন বাংলার বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়, অর্জুন সিংহ, রাজু বিস্তারা। বৈঠক সেরে বেরিয়ে আসার পর, সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘অমিত শাহ আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে। এরপর যুগ্মসচিব স্তরের আধিকারিকের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় দল বাংলায় যাবে। যে ঘটনা ঘটেছে তা মানবতার লজ্জা। বাংলায় এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন, তা খতিয়ে দেখতে দিল্লি থেকে দল যাবে বাংলায়।’
এদিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতির দাবীর তীব্র সমালোচনা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘কেরলে, রাজস্থানে উত্তরপ্রদেশে যখন গোলমাল হয়, তখন কি সেখানে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল যায়? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই পশ্চিমবাংলার মানুষের শান্তি সম্প্রীতি বিঘ্নিত করাই আসল উদ্দেশ্য।’
অন্যদিকে, রামপুরহাটের ঘটনায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও মুখ্য সচিবের কাছে রিপোর্ট তলব করেছেন। বাংলায় হিংসার সংস্কৃতি চলছে বলেও তিনি টুইটে আক্রমণ করেন। উল্লেখ্য, আজই রামপুরহাটের সোমবার রাতের সেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেই জানিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য। মঙ্গলবার ভবানীভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, গতকাল রাতে বীরভূমের একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে। যেখানে তৃণমূলের উপপ্রধানকে খুন করা হয়েছে। আরও একটি ঘটনা ঘটেছে। বগটুই গ্রামে কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মাঝরাতেই পুলিশ এবং দমকল ঘটনাস্থলে যায়। একটি বাড়ি থেকেই ৭ জনের অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়েছে।
এদিন ডিজি বলেন, ‘গতকাল দমকল তিনজনের দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। আজ সকালে আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়। এরপরই একটি বাড়ি থেকে ৭ জনের দেহ উদ্ধার করা হয়। কীভাবে এতো বড় দুর্ঘটনা ঘটল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করে দিয়েছি। ইতিমধ্যেই এসডিপিও এবং আইসি-র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যারা দোষী, তাদের সবার বিরুদ্ধেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজ সকালেই জ্ঞানবন্ত সিংয়ের নেতৃত্বে স্পেশাল টিমকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ১১ জনকে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রয়েছে। আগুন লাগার এক ঘণ্টার মধ্যেই যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে।’
জানা গিয়েছে, ওই স্পেশাল টিমে রয়েছেন এডিজি সিআইডি জ্ঞানবন্ত সিং, বর্ধমানের আইজি ভরতলাল মিনা, রয়েছেন ডিআইজি সিআইজি মিরাজ খালিদ। এদিন ডিজি জানিয়েছেন যে, সঞ্জু শেখ নামে একজনের বাড়িতে আগুনে পরিবারের সকলের মৃত্যু হয়েছে। এই বাড়ির লাগোয়া বেশ কয়েকটি বাড়ি থাকায় দ্রুতই সেই বাড়িগুলিতেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ডিজি জানিয়েছেন যে, এই ঘটনার পিছনে কোনও রাজনৈতিক যোগ নেই। ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। রামপুরহাটের ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই, এমনটা তৃণমূলের দাবি, যদিও বিজেপি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তৃণমূল বলছে, এর নেপথ্যে রয়েছে গ্রাম্য বিবাদ। এবার রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্যও কার্যত সেই তত্ত্বেই সিলমোহর দিলেন।
রামপুরহাটের ঘটনায় তদন্তের ভার গিয়ে পড়েছে তিন সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দলের হাটে। এই অবস্থায় এবার কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ চেয়ে অমিত শাহের দ্বারস্থ হল রাজ্য বিজেপি। রামপুরহাটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্রমশ পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :