বংনিউজ২৪×৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ সংসারে নিত্য অভাব। তার উপরে ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। বাবা-মারও বয়স হয়েছে। চরম দারিদ্রতার কারণে ছেলের চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে পারছেন না তাঁরা। এদিকে মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় ছেলের মারমুখী আচরণের কারণে প্রাণ ওষ্ঠাগত বাবা-মার। তাই বাধ্য হয়ে ছেলেকে বেঁধে রেখেছেন শিকল দিয়ে। এই পরিস্থিতিতে পাশে পাননি কাউকে। এমনকি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি স্থানীয় প্রশাসনও। চরম অসহায়তার মধ্যে ছেলেকে নিয়ে দিন কাটছে বাবা-মার।
এমনই অমানবিক ঘটনার সাক্ষী মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কলমপাড়া গ্রাম। ওই এলাকার বাসিন্দা সনাতন দাস। তিনি পেশায় ভ্যানচালক। তাঁর স্ত্রী চিনু দাস লোকের বাড়ি পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁদের দুই মেয়ে এবং দুই ছেলে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বড় ছেলের নাম ছোটন দাস। এক দুর্ঘটনার ফলে ছোট থেকেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন ছোটন। এরপর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে পাগলামিও। নিজের সাধ্যমতো ছেলের চিকিৎসা করিয়েছিলেন সনাতন বাবু। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হয়নি।
এদিকে পরিবারে চরম অর্থাভাব। ভ্যানচালক সনাতন বাবুর পক্ষে যেখানে দু’বেলা অন্নসংস্থান করাও কঠিন সেখানে ছেলের চিকিৎসার খরচ যোগানো একপ্রকার অসম্ভব বললেই চলে। কিন্তু চিকিৎসার অভাবে ক্রমশই হিংস্র হয়ে উঠছেন ছোটন। এমনকি পাড়ার বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর থেকে শুরু করে পাড়া-প্রতিবেশীকে মারধর পর্যন্ত করছেন। এই অবস্থায় সন্তানকে শিকল পরিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছেন বাবা-মা।
জানা গিয়েছে, দুয়ারে সরকার ক্যাম্পের মাধ্যমে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতে ছেলের জন্য প্রতিবন্ধী শংসাপত্রের আবেদন করেছিলেন সনাতন বাবু। বছর ঘুরতে চলল। কিন্তু এখনও মেলেনি সেই সার্টিফিকেট। জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্তাদের দরজায় দরজায় ঘুরেও কোনও লাভ হয়নি। পাশে দাঁড়ায়নি কেউই। তাই বাধ্য হয়ে বাড়ির উঠোনে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন ছেলেকে। এই প্রসঙ্গে সনাতনবাবু জানান, টাকার অভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি। মেলেনি প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেটও। অসহায় বাবার আশঙ্কা, এভাবে চিকিৎসার অভাবেই না ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে ছেলেটি!
এই প্রসঙ্গে এক স্থানীয় বাসিন্দা পূর্ণিমা সাহা বলেছেন, “পরিবারটি খুবই গরীব। ছেলের চিকিৎসা করানোর মত পয়সা নেই। পাড়া-প্রতিবেশীরা এর আগে সাহায্য করেছিল। কিন্তু সেটা আর কতটুকু! স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য দফতরের উচিৎ এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো।”
আপনার মতামত লিখুন :