বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ শেষরক্ষা হল না। নার্স স্ত্রীর হাত কেটে নেওয়ার পর পালানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ভেস্তে গেল সেই পরিকল্পনা। অবশেষে গ্রেফতার রেণুর স্বামী। মঙ্গলবার রাত পৌনে ৯ টা নাগাদ কেতুগ্রাম ও মুর্শিদাবাদের সীমান্ত থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্তকে। এদিকে, আজ সকালেই মূল অভিযুক্ত রেণুর স্বামীর বাবা-মাকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।
কেতুগ্রামের কোজলসা গ্রামে শ্বশুরবাড়ি রেণু খাতুন নামে ওই যুবতীর। রেণুর বাপের বাড়ি কেতুগ্রামের চিনিসপুর গ্রামে। এই গ্রামেরই বাসিন্দা আজিজুল হকের ছোট মেয়ে রেণু। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে কোজলসা গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ শেখের একমাত্র ছেলে শের মহম্মদ শেখ ওরফে শরিফুলের সঙ্গে বিয়ে হয় রেণুর। বিয়ের আগে তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। রেণু নিজে নার্সের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্সের পদে চাকরিও করছিলেন। সম্প্রতি সরকারি নার্সের চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। কিছুদিন আগেই প্যানেলে তাঁর নাম ওঠে। চাকরিতে যোগ দেওয়া ছিল শুধুই সময়ের অপেক্ষা।
কিন্তু চাকরি পাওয়ার আগেই ঘটে যায় বড় বিপদ। সরকারি চাকরি পেলে স্ত্রী ছেড়ে চলে যাবে। এই ধারণা বদ্ধমূল হয় শরিফুলের মনে। আর এই ধারণা তার মনে গেঁথে দেয় শরিফুলের বন্ধুরা। শরিফুল পেশায় একজন মুদি দোকানি। স্ত্রী সরকারি চাকরি করবে এটা কিছুতেই মানতে পারেনি শরিফুল। সরকারি চাকরি করতে দেবে না বলে, শেষে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে স্ত্রীর হাত কব্জি থেকে কেটে নেয় সে।
ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিল সে। অবশেষে মঙ্গলবার রাতে কেতুগ্রাম ও মুর্শিদাবাদের সীমান্ত এলাকা থেকে মূল অভিযুক্ত অর্থাৎ রেণুর স্বামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদে আত্মগোপনের পরিকল্পনা করেছিল শরিফুল। কিন্তু সেই পরিকল্পনা শেষপর্যন্ত সফল হল না। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে। নির্যাতিতার শ্বশুর, শাশুড়ি ও স্বামীকে জেরা করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে আর কারও কোনওরকম যোগ রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সবে মাত্র তিনদিন পার হয়েছে। আতঙ্ক ও যন্ত্রণার ছাপ এখনও চোখে-মুখে স্পষ্ট। কিন্তু থেমে নেই লড়াই। স্বামী শরিফুল তাঁকে সরকারি চাকরি করতে দেবে না, তাই স্ত্রী রেণু খাতুনের ডান হাতের কব্জি কেটে নিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কী? মঙ্গলবার থেকেই দুর্গাপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালের বেডে শুয়েই শুরু করলেন নতুন লড়াই। জীবনযুদ্ধে হার না মানার মানসিকতাকে সঙ্গী করে নতুন পথচলা শুরু করলেন বর্ধমানের কেতুগ্রামের রেণু খাতুন। বাঁ হাত দিয়েই শুরু করলেন লেখালিখি। রেণুর পাখির চোখ, সরকারি নার্সিংয়ের চাকরি করবেনই। তাই ডান হাতের কব্জি বাদ গেলেও, যাতে শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় পিছু হটতে না হয়, তার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন। এদিন তাঁর সঙ্গে দুর্গাপুরের নার্সিংহোমে রেণু খাতুনের সঙ্গে দেখা করতে আসেন রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যান লীনা গঙ্গোপাধ্যায়।
জানা গিয়েছে, মঙ্গলবারই স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে রেণুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। রেণুর পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর সহকর্মীরাও। এই ভয়ঙ্কর অপরাধ ঘটানোর জন্য অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন রেণুর পাশাপাশি তাঁর সহকর্মী এবং পরিবার-পরিজনেরা।
আপনার মতামত লিখুন :