বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ চানাচুর খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে, বছর পাঁচেকের শিশু কন্যাকে ধর্ষণ ও খুনের দায়ে এক যুবককে মৃত্যুর সাজা শোনালো কাটোয়া আদালত। বছর চারেকে আগে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামে ঘটে ওই ঘটনা। শুক্রবার সেই মামলায় দোষীকে ফাঁসির সাজা শোনালেন কাটোয়া অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালতের বিচারক সুকুমার সূত্রধর।
শিশুকন্যা ধর্ষণ এবং মৃত্যুদণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্তের নাম জাহাঙ্গির চৌধুরী। ওই ধর্ষণ এবং খুনের মামলাতেই অভিযুক্তকে বৃহস্পতিবার দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। এরপর আজ এজলাসে সাজা শোনানর আগে বিচারক বলেন, ‘এই অপরাধ জঘন্য থেকে জঘন্যতম। তাই অপরাধী ফাঁসির সাজারই যোগ্য।’
২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি খাসপুর গ্রামের কলাপুকুর পাড়ের বাসিন্দা এক গৃহবধূ অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি জানান যে, ঘটনার দিন সন্ধে সাড়ে ৬ টা নাগাদ তাঁর ৫ বছরের শিশুকে চানাচুর কিনে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ডেকে নিয়ে যায় জাহাঙ্গির চৌধুরী। পাড়ারই একটি দোকানে নিয়ে যায় শিশুটিকে। দোকান থেকে চানাচুর কিনেও দেয়। কিন্তু তারপর থেকেই নিখোঁজ হয়ে যায় তাঁর সন্তান। পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। কিন্তু অনেক খোঁজার পরেও শিশুটিকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, পরের দিন বেলা ১১ টা নাগাদ পাড়ারই লাল কাজই নামে এক ব্যক্তির বাড়ির পাশের ডোবা থেকে শিশুটির দেহ উদ্ধার হয়। শিশুটির গলায় পুঁতির মালা ছিল। দেহ উদ্ধারের পর সেই মালাটিও মেলেনি। এদিকে, জাহাঙ্গির যেহেতু ঘটনার দিন শিশুটিকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। তাই প্রথমেই তার দিকে সন্দেহ যায়। এরপর জাহাঙ্গিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয় থানায়। এদিকে, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে শিশুটির যৌনাঙ্গ-সহ দেহের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। তদন্ত চলাকালীন পুলিশ অভিযুক্তের বাড়ি থেকে শিশুর গলার পুঁতির মালা উদ্ধার করে। জানা গিয়েছে, জাহাঙ্গির কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করত। ঘটনার কয়েকদিন আগে সে বাড়ি এসেছিল।
এরপর মৃত ওই শিশুকন্যার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে জাহাঙ্গিরকে গ্রেফতারও করা হয়। তারপর থেকে সে জেলেই ছিল। জানা গিয়েছে, ওই মামলায় মত ২১ জনের মধ্যে ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। ২০১৮ সালের ১১ মে পুলিশ মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করে। গতকালই অভিযুক্তকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে এবং আজ তাঁকে ফাঁসির সাজা শোনালেন কাটোয়া অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালতের বিচারক সুকুমার সূত্রধর। এর পাশাপাশি তাঁকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়।
এদিন ফাঁসির সাজা শোনার পর আদালতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে জাহাঙ্গির চৌধুরী। তার এক আত্মীয় আদালতে কক্ষে অজ্ঞান হয়ে যান। এদিকে, জাহাঙ্গির চৌধুরীর বাবা সিরাজ চৌধুরী বলেন, ‘আমার ছেলে নির্দোষ। তাকে ফাঁসিয়ে শাস্তি দেওয়া হল। এই রায় আমি মানি না। আমার ছেলের সুবিচারের জন্য উচ্চ আদালতে যাব।’ অন্যদিকে, এই রায়ে খুশি নির্যাতিতা ওই শিশুকন্যার বাবা-মা- সহ গোটা পরিবার। তাঁরা বলেন, ‘আমরা এতদিন পর সঠিক বিচার পেলাম।’
আপনার মতামত লিখুন :