বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ৭ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় নকল রুখতে কড়া নির্দেশ দিয়েছে পর্ষদ। পর্ষদের পক্ষ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য ৭ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত পরীক্ষা চলাকালীন ইন্টারনেট পরিষেবা রাজ্যে ৮ জেলায় বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই মর্মে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়। এরপর পরীক্ষার তৃতীয় দিনেই এর বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে।
বুধবার এই মামলা ওঠে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চে। মামলার শুনানির শুরুতেই মামলাকারী সওয়াল করেন, পর্ষদের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সকাল ১১ টা থেকে বিকাল ৩ টে ১৫ মিনিট পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকলে, অনেক জরুরি পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটবে। এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রাজ্য সরকারকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। কেন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হবে, সে বিষয়টি হলফনামায় উল্লেখ করতে বলা হয়েছিল।
এদিন ফের এই মামলার শুনানিতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করল কলকাতা হাইকোর্ট। অর্থাৎ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ নয়। পরিষেবা চালু থাকবে, এই বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করতে হবে। এমনটাই এদিন মামলার শুনানিতে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
এদিন মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের নির্দেশে স্থগিতাদের জারি করে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। পাশাপাশি বলে হয়েছে যে, পরীক্ষায় নকল রুখতে সব রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে প্রশাসন ও মাধ্যমিক বোর্ড। আদালতের পর্যবেক্ষণ, যেহেতু পরীক্ষা হলের ভিতরে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ নিষেধ, তাই ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা যাবে না।
বৃহস্পতিবার শুনানির শুরুতেই রিপোর্ট জমা দেয় বোর্ড ও সরকার পক্ষ। রিভিউ কমিটির বৈঠকের পর রিপোর্ট দেয় সরকার। এদিন শুনানি চলাকালীন রাজ্যের এজি বলেন যে, গতবারের মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিভিন্ন জায়গায় হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল। এবারে যে ৭ টি জেলায় নেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে, সেখানে প্রশ্ন ফাঁসের হার অনেক বেশি ছিল। সেই কারণেই ওই জেলাগুলির কিছু কিছু জায়গাই পরীক্ষা চলাকালীন নেট পরিষেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
রিভিউ কমিটির মত, ছাত্রদের কথা বিবেচনা করে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধরে রাখতে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর কোনও বিকল্প পথ নেই। প্রশ্ন ফাঁসের কারণে পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। যারা এই প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে যুক্ত নয়, সেই সব পড়ুয়াদের ক্ষতি হয়। তাই ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও ভয়েস কল ও ম্যাসেজ বহাল থাকবে।
এরপরই হাইকোর্টর প্রধান বিচারপতি বলেন যে, পরীক্ষার হলে মোবাইল নিয়ে যাওয়া মানা। তাহলে তাঁরা ইন্টারনেট ব্যবহার কী করে করবে? পাশাপাশি তিনি আরও বলেন যে, রাজ্য সরকার প্রশ্ন তৈরি করলে, নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বও রাজ্যের। বিচারপতির এই কথা শোনার পরই এজি বলেন, সেই কারণেই ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্ত। কিন্তু এরপর মামলাকারীর আইনজীবী বলেন, এর আগে কোনদিনও ইন্টারনেট বন্ধ প্রয়োজন হল না, তাহলে এখন কেন? রিভিউ কমিটির কাজ কী? তাঁরা বুঝেছেন না, এই সিদ্ধান্তের কারণে জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। এরপরই ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দেয় আদালত।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পর্ষদের পক্ষ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য ৭ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত পরীক্ষা চলাকালীন ইন্টারনেট পরিষেবা রাজ্যের ৭ জেলায় বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই মর্মে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়। মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয় বেলা ১১.৪৫ মিনিট থেকে, চলবে ৩ টে পর্যন্ত। পরীক্ষা চলাকালীন রাজ্যের মধ্যে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, বীরভূম এবং দার্জিলিঙে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। মার্চের ৭, ৮, ৯, ১১, ১২, ১৪, ১৫ ও ১৬ তারিখ নেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে। জেলা ভিত্তিক বিভিন্ন ব্লকে নেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে। পরীক্ষাকেন্দ্রগুলির আশেপাশে জ্যামার বসিয়ে দেওয়া হবে। এতে যতক্ষণ পরীক্ষা হবে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া ঠেকাতেই এই সিদ্ধান্ত বলেই জানানো হয়েছিল। কিন্তু এরপরই এই সিদ্ধান্তের জেরে পরীক্ষার তৃতীয় দিনেই দায়ের হয় মামলা।
আপনার মতামত লিখুন :