বংনিউজ২৪×৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ সরকারি চাকরি পেয়েছেন স্ত্রী। আর্থিক দিক থেকে স্বাবলম্বী হওয়ায় যে কোনও মুহূর্তে স্ত্রী বিবাহ বন্ধন থেকে বেরিয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কাই গ্রাস করেছিল স্বামীকে। হিংসার বশবর্তী হয়ে ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ নিলেন স্বামী। কেটে নিলেন স্ত্রীর ডান হাতের কব্জি। এই ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম। হাত কাটা অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন স্ত্রী। ঘটনার পর থেকেই পলাতক স্বামী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
প্রকাশ্যে এই নির্মম ঘটনা ঘটার পর থেকেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে কেতুগ্রামে। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত স্বামীর নাম শের মহম্মদ শেখ। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে শের মহম্মদ শেখ ওরফে শরিফুলের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন কেতুগ্রামের চিনিসপুর গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল হকের ছোট মেয়ে রেণু খাতুন। রেণুর পরিবার জানিয়েছে, পড়াশোনা চলাকালীনই শরিফুলের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। পরে দুই পরিবারের সম্মতিতেই রেণু ও শরিফুলের চার হাত এক হয়।
নার্সিংয়ের প্রশিক্ষণ শেষ করে রেণু প্রথমে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তবে সম্প্রতি পরীক্ষায় পাশ করে প্যানেলভুক্ত হওয়ার পর একটি সরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরি পান তিনি। কেবল চাকরিতে যোগ দেওয়াই বাকি ছিল। অন্যদিকে শের মহম্মদ শেখ ছিলেন কার্যত বেকার। রোজগার বলতে কিছুই ছিল না। তাই স্ত্রী সরকারি চাকরি পেয়ে যাওয়ায় হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করেন তিনি। যে কোনও মুহূর্তে বিবাহ বন্ধন বিচ্ছিন্ন করে স্বামীকে ছেড়ে চলে যেতে পারেন রেণু, এই আশঙ্কা ক্রমশই গ্রাস করতে থাকে শরিফুলকে। সেই থেকেই রেণুকে পঙ্গু করার পরিকল্পনা করতে থাকেন তিনি।
জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে রেণু খাতুন যখন ঘুমোতে যান তখন আচমকাই তাঁর স্বামী শরিফুল ও তাঁর বন্ধুরা মিলে চড়াও হন। এলোপাথাড়ি ধারালো অস্ত্রের কোপে কেটে নেন ডান হাতের কব্জি। রেণুর চিৎকার যাতে কারুর কানে না যায় সেই জন্য স্বামী তাঁর মুখে বালিশ চেপে ধরেছিলেন বলে অভিযোগ। এরপর ঘটনার পরই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান শরিফুল ও তাঁর বন্ধুরা।
এরপর রেণুর চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় প্রতিবেশীদের। তারা এসে দেখেন হাত কাটা অবস্থায় কাতরাচ্ছেন রেণু। তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় কাটোয়া মহাকুমা হাসপাতালে। এরপর সেখান থেকে দুর্গাপুর মিশন হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। আপাতত সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন রেণু। কিন্তু তাঁর হাত আদৌ জোড়া লাগবে কিনা সেই নিয়ে যথেষ্ট সংশয় প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা।
শরিফুল রেণুর যাবতীয় কাগজপত্র ও সার্টিফিকেট নিয়েই পালিয়ে গিয়েছেন। ইতিমধ্যেই শরিফুল, তাঁর বাবা-মা ও দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে কেতুগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। শুরু হয়েছে তদন্ত। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে কেতুগ্রাম থানার পুলিশ। শরিফুলের এই নৃশংস কাজ দেখে তাঁর মানসিক সুস্থতা নিয়েও প্রশ্ন হচ্ছে। এমনকি এর আগে স্ত্রী রেনুর ওপর মানসিক বা শারীরিক অত্যাচার চালাতেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :