বংনিউজ২৪×৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ রেশন কার্ড বানানোর আবেদন জানিয়ে দিনের পর দিন ঘুরেছেন বিডিও অফিসে। কার্ড না থাকায় নাম ওঠেনি লক্ষীর ভান্ডারেও। তার উপরে বিশেষভাবে সক্ষম কন্যাসন্তানের পা ভেঙে গিয়েছে সম্প্রতি। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই স্টেশনের ধারে রাস্তায় বসে ভিক্ষা করেন বারুইপুরের অপর্ণা হালদার। অন্নসংস্থান করতে প্রতিদিন যে কটা টাকা মেলে তা দিয়ে অত্যন্ত কষ্ট করেই দিন কাটে। এভাবেই চলে অপর্ণার জীবন।
অপর্ণা বারুইপুরের বাসিন্দা। কাকদ্বীপের নিশ্চিন্তিপুরে তাঁর শ্বশুরবাড়ি। কিন্তু বিশেষ কারণে দু`বছর আগেই শ্বশুরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন অপর্ণা। এরপরই ৭ বছরের মেয়েকে নিয়ে চলে আসেন বারুইপুরে। মেয়ের মুখে খাবার তুলে দিতে বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তির পথ। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাস্তার ধারে বসে থাকেন তিনি। কোনওদিন টাকা পান, কোনওদিন আবার সেটাও জোটে না সেভাবে। সন্তানও অপুষ্টির শিকার। ঠিক কতদিন যে অপর্ণার এই লড়াই চলবে তা তিনি নিজেও জানেন না।
অপর্ণার রেশন কার্ড নেই। কার্ড বানাতে কাকদ্বীপ বিডিও অফিসে গিয়েছিলেন বহুবার। কিন্তু কেউ সহযোগিতা করেননি। উল্টে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছেন। বাংলার মহিলাদের জন্য লক্ষীর ভান্ডার-এর ব্যবস্থা থাকলেও সেই সুবিধা থেকে ব্রাত্য অপর্ণা। কারণ তাঁর যে রেশন কার্ডই নেই! স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকলেও তা দিয়ে বিশেষ সুবিধা হয়নি। মেয়ের চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে পারেননি তিনি। প্রতিদিন যাকেই দেখেন তাকেই হাতজোড় করে অনুরোধ করেন রেশন কার্ড করে দিতে। লক্ষীর ভান্ডারে নাম তুলতে একটু সহযোগিতা পাওয়ার আশায় দিন গোনেন বারুইপুরের অপর্ণা।
রেশন কার্ড থাকলে অন্তত তাঁর খাওয়ার কষ্টটা থাকত না। টাকার অভাবে প্রায় প্রতিদিনই অভুক্ত থাকতে হয় মেয়েকে। খুব কষ্ট হলে সন্তানের মুখে তুলে দেন দুটি বিস্কুট আর একটু জল। ক্রমশই অপুষ্টি গ্রাস করছে ৭ বছরের সন্তানকে। একটাই আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে অপর্ণাকে, যদি না খেতে পেয়ে মেয়েটা মরে যায়! কিন্তু নিরুপায় মা! যত দিন যাচ্ছে তিনি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
রাজ্যের মহিলাদের জন্য একাধিক প্রকল্পের বাস্তবায়ন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এমন অনেক মহিলা আছেন যারা সত্যিই দুঃস্থ, যারা সরকারি প্রকল্পের সুবিধাটুকুও পাননা। তাদেরই মধ্যে একজন হলেন অপর্ণা হালদার। স্থানীয় প্রশাসন যদি রেশন কার্ড করে দিতে এবং লক্ষীর ভান্ডারে নাম তুলে দিতে সাহায্য করত তাহলে এতটা কষ্টের মধ্যে দিন কাটতো না অপর্ণার। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বদের সামান্য উদ্যোগ ও অল্প সংবেদনশীলতা থাকলেই এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতেন বারুইপুরের অপর্না হালদার।
আপনার মতামত লিখুন :