বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ রামপুরহাটে সোমবার রাতে জাতীয় সড়কের ধারে একটি দোকানে বসে থাকার সময় বোমা মেরে খুন করা হয় রামপুরহাটের একটি গ্রামের পঞ্চায়েতের উপপ্রধানকে। বোমার আঘাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই, ফের একবার অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে রামপুরহাট। অভিযোগ রাতের অন্ধকারে গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, সোমবার রাতের সেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেই জানালেন রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য। মঙ্গলবার ভবানী ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, গতকাল রাতে বীরভূমের একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে। যেখানে তৃণমূলের উপপ্রধানকে খুন করা হয়েছে। আরও একটি ঘটনা ঘটেছে। বগটুই গ্রামে কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মাঝরাতেই পুলিশ এবং দমকল ঘটনাস্থলে যায়। একটি বাড়ি থেকেই ৭ জনের অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়েছে।
এদিকে, রামপুরহাটে উপপ্রধান ভাদু শেখের খুনের ঘটনা এবং তার পরে বগটুই গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দমকলের পক্ষ থেকে ১০ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। কোনও কোনও মহল এই ঘটনায় রাজনৈতিক যোগ আছে বলেই দাবি করছে। এদিকে, রামপুরহাটের ঘটনার পর, বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজা। উভয় রাজনৈতিক দলের নেতারা একে অপরের উপর দোষ চাপাচ্ছেন। বীরভূম তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল রাতে বোমাবাজি এবং অশান্তির খবর অস্বীকার করেছেন। এমন কিছু ঘটেনি বলেই তাঁর দাবি। তিনি জানিয়েছেন যে, ওখানে একটি বাড়িতে শর্ট সার্কিট হওয়ার জেরেই এই দুর্ঘটনা এবং এতোজনের মৃত্যু হয়েছে বলেই তিনি দাবি করেছেন।
আবার ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন যে, উপপ্রধান খুনের পর আদতে ওখানে ঠিক কী ঘটেছে সে ব্যাপারে কেউ কিছু জানে না। সবটাই তদন্ত সাপেক্ষ। পাশাপাশি এতজনের মৃত্যু দুঃখজনক বলেই মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে, রাজ্য বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য দাবি করেছেন যে, রাজ্যে যে আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে, রামপুরহাটের ঘটনা সেটাই আরও একবার প্রমাণ করল। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। এর নেপথ্যে রয়েছে গ্রাম্য বিবাদ। এবার রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্যও কার্যত সেই তত্ত্বেই সিলমোহর দিলেন।
এদিন ডিজি বলেন, ‘গতকাল দমকল তিনজনের দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। আজ সকালে আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়। এরপরই একটি বাড়ি থেকে ৭ জনের দেহ উদ্ধার করা হয়। কীভাবে এতো বড় দুর্ঘটনা ঘটল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করে দিয়েছি। ইতিমধ্যেই এসডিপিও এবং আইসি-র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যারা দোষী, তাদের সবার বিরুদ্ধেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজ সকালেই জ্ঞানবন্ত সিংয়ের নেতৃত্বে স্পেশাল টিমকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ১১ জনকে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রয়েছে। আগুন লাগার এক ঘণ্টার মধ্যেই যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে।’
জানা গিয়েছে, ওই স্পেশাল টিমে রয়েছেন এডিজি সিআইডি জ্ঞানবন্ত সিং, বর্ধমানের আইজি ভরতলাল মিনা, রয়েছেন ডিআইজি সিআইজি মিরাজ খালিদ। এদিন ডিজি জানিয়েছেন যে, সঞ্জু শেখ নামে একজনের বাড়িতে আগুনে পরিবারের সকলের মৃত্যু হয়েছে। এই বাড়ির লাগোয়া বেশ কয়েকটি বাড়ি থাকায় দ্রুতই সেই বারিগুলিতেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এই মুহূর্তে এডিজি পশ্চিমাঞ্চল ঘটনাস্থলে রয়েছেন। ডিজি জানিয়েছেন যে, এই ঘটনার পিছনে কোনও রাজনৈতিক যোগ নেই। ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :