বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ বগটুই কাণ্ডে আবার নয়া মোড়! এমনিতেই বগ টুই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত রাজ্য-রাজনীতি। তার মধ্যেই ফের নতুন করে অস্বস্তি আরও বাড়ল তৃণমূল কংগ্রেসের। বগটুইয়ের ঘটনায় বিরোধীদের কাঠগড়ায় এবার খোদ বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। বগটুই হত্যাকাণ্ডের মামলায় ধৃত রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনের কথাতেও মিলল ষড়যন্ত্রের আভাস। যদিও কে বা কারা এই ষড়যন্ত্র করেছিল, তা অবশ্য খোলসা করেননি তিনি। এদিকে, জোড়াফুল শিবিরের অন্দরেও নানা গুঞ্জন ছড়িয়েছে। এর মাঝেই বিস্ফোরক দাবি করলেন অনুব্রত মণ্ডল। অন্যদিকে, এই মন্তব্যকে কেন্দ্র পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন একটি মুচলেখা প্রকাশ্যে আসে, যা গতবছর জুন মাসের ১০ তারিখ বিধায়কের পক্ষ থেকে জেলা সভাপতিকে লেখা। সেই মুচলেখায় বলা ছিল যে, রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি পদ থেকে যেন আনারুল হোসেনকে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্যন্ত সরানো না হয়। সেই লেখা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলেই দাবি করেছেন বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। পাশাপাশি তিনি এও বলেন, ‘আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লিখিত অনুরোধেই আনারুলকে রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি পদে বহাল রাখা হয়েছিল।’
অনুব্রত মণ্ডলের এই দাবির পরে, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে, কেন হঠাৎ করে আনারুলকে পদে বহাল রাখার জন্য মুচলেখা দিতে হলে বিধায়ককে? এ প্রসঙ্গে অনুব্রত মণ্ডল, দাবি করেছেন যে, ‘কিছু খবর পেয়েছিলাম বলেই আনারুলকে সরাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আশিসবাবুর অনুরোধে তাকে রেখে দিতে হয়। তাছাড়া বিধানসভা এলাকাটা আশিসবাবুই কন্ট্রোল করতেন। তাই ওকে একটা লিখিত দিতে বলেছিলাম। এই বিষয়টি তিনিই বলতে পারবেন।’
এদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আনারুলকে সাংগঠনিক পদে রেখে দেওয়ার জন্য বিতর্ক তৈরি হতেই, এখন পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেই দায় দিয়ে, নিজের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখতে চাইছেন অনুব্রত মণ্ডল।
তবে, অনুব্রত মণ্ডলের এইসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুব্রত’র অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছে যে, ‘বিধানসভা নির্বাচনের পর একটা সাধারণ সভা হয়েছিল। সেখানেই আনারুলকে সরানোর কথা বলেছিলেন অনুব্রত। কিন্তু অঞ্চল সভাপতিরা অনুরোধ করেন এখনই কাউকে পদ থেকে সরাবেন না। সেই জন্যই ওঁর কথামতো আমি একটা লিখিত দিয়েছিলাম। তবে, কাকে সরানো হবে, না হবে সেটা তো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত। যেটা ঠিক করবেন জেলা সভাপতি।’
প্রসঙ্গত, বগটুই হত্যাকাণ্ডের যে রিপোর্ট জেপি নাড্ডকে জমা করা হয়েছে বিজেপির তরফে। সেই রিপোর্টেও অনুব্রত মণ্ডলের নাম রয়েছে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এই রিপোর্টে অনুব্রত মণ্ডলের নাম রাখা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এদিকে, জেপি নাড্ডকে সেই রিপোর্ট দেওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আনারুলের দলীয় পদে থাকা নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করে বসলেন বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতা। সেই দাবিকে কেন্দ্র করে এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরুতে অবস্থান করছেন জোড়াফুলের বিধায়ক ও জেলা সভাপতি।
এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তি বেড়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। এদিকে, এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘একটি লেখা সামনে এসেছে। বিধায়ক বলেছেন তাঁরই লেখা। তবে সেটি গত বছরের। সেই সময়ের প্রেক্ষিতে লেখা ওই চিঠি নিয়ে এখন বিতর্ক উঠছে। জেলার বিষয়, তাই সবার সঙ্গে কথা বলেই পুরো বিষয়টি দেখতে হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :