বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ আগামিকাল আবারও মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হবে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের। এরপর বুধবার তাঁদের আদালতে পেশ করা হবে। তার আগে আজ জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে পার্থ-অর্পিতাকে। এদিকে, ইতিমধ্যেই তাঁরা সংবাদমাধ্যমের সামনে সংক্ষিপ্ত হলেও বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলেই ইডি সূত্রে খবর।
বিশেষ করে, পার্থর করা ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’ মন্তব্যের উপর বেশি জোর দিচ্ছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। কারণ এর আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর, সেখানেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর তিনি জানিয়েছিলেন যে, তিনি ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’। এছাড়াও পরবর্তী ধাপেও একইভাবে হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময়, ঢোকার মুহূর্তে তিনি জানিয়েছিলেন, এই টাকা তাঁর নয়, কাদের ষড়যন্ত্র, তাও সময় এলেই বোঝা যাবে বলে জানিয়েছিলেন।
ইডি-র তদন্তকারী আধিকারিকরা এখন জানতে চাইছেন কাদের ষড়যন্ত্রের কথা বলতে চেয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়? এই কথার অর্থ কী? জানা গিয়েছে, কখনও আলাদা আলাদাভাবে আবার কখনও মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাঁদের সব গতিবিধির উপর নজর রাখছে সিসি ক্যামেরা। সোমবার ইডি-র তদন্তকারী আধিকারিকদের একের পর এক প্রশ্নবাণে কার্যত জর্জরিত পার্থ-অর্পিতা উভয়েই।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য সামনে আছে। তদন্ত যতোই এগোচ্ছে, ততোই কুবেরের খাজানার সন্ধান মিলছে। সব মিলিয়ে এই দুর্নীতির শিকর কতোটা গভীরে নিহিত, তা বুঝে উঠতেই হিমশিম খাচ্ছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে, প্রত্যকে মুহূর্তে তাঁরা যোগাযোগ রেখে চলছেন দিল্লির সদর দফতরের ইডি-র শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে। সেখান থেকে যেমন যেমন নির্দেশ আসছে, সেই অনুযায়ী তদন্তের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এখানকার তদন্তকারী আধিকারিকরা।
উল্লেখ্য, ৩ আগস্ট পর্যন্ত পার্থ এবং অর্পিতা দুজনকেই ইডি-র হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, প্রতি ৪৮ ঘণ্টা অন্তর তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করানো হচ্ছে। সেই মতো আগামিকাল ফের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে দুজনের। তার আগে আজই শেষ সুযোগ জিজ্ঞাসাবাদের।
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে যে, আজ খুব সকাল থেকেই পার্থ এবং অর্পিতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হয়। উদ্দেশ্য যতটা সম্ভব তথ্য তাঁদের থেকে বের করা। অর্পিতার দুই ফ্ল্যাট মিলিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকা উদ্ধারের পরেও আরও ৮ কোটির খোঁজ পেয়েছে ইডি। এই টাকার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্রিজড করা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে।
ইডির প্রশ্ন, এই বিপুল পরিমাণ টাকা কার? কোথা থেকে এই বিশাল টাকা পেয়েছেন? সোনা, রুপো, হীরের গয়নার উৎসই বা কী? এই সবই প্রশ্ন করা হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতাকে। এদিকে, সূত্রের খবর, পার্থ জানিয়েছেন, এই টাকা তাঁর নয়। কার টাকা তাও তিনি জানেন না বলেই জানিয়েছেন। পাশাপাশি মিডিয়াতে যে তিনি বলেছেন, তিনি ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’, সেই বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হয় যে, তিনি কার ষড়যন্ত্রের শিকার? কিন্তু ইডি-র এই প্রশ্নে তিনি চুপ থেকেছেন বলেই খবর। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে এও জানতে চান তদন্তকারীরা যে, দলের কেউ ষড়যন্ত্র করেছে কিনা, এই প্রশ্নেরও কোনও উত্তর দেননি তিনি? চুপ থেকেছেন। ইডি সূত্রে খবর তদন্তে কোনভাবেই সহযোগিতা করছেন না পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
এদিকে, অভিযোগ উঠেছে, হাওলার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা ইতিমধ্যেই বিদেশে পাচার করেছেন পার্থ-অর্পিতারা। এমনকী বাংলাদেশেও নাকি এ রাজ্যের চাকরি ‘বিক্রি’র টাকা পাঠানো হয়েছে। আর এই কাজে নাকি তাঁদের সাহায্য করেছেন উত্তর ২৪ পরগনার এক বস্ত্র ব্যবসায়ী। এই চক্রে তাঁদের পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকজন যুক্ত আছেন বলেও অভিযোগ। এই সব অভিযোগ নিয়েই পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে সকাল থেকে জেরা শুরু করেছে ইডির তদন্তকারী আধিকারিকরা। তাঁদের সব বয়ান রেকর্ড করা হচ্ছে বলেও ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :