বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ এসএসসি নিয়োগ দিরনিতি মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে ইডি। পাশাপাশি পার্থ ঘনিষ্ঠ অভিনেত্রী-মডেল অর্পিতার টালিগঞ্জের ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। ওই টাকা স্কুলে বেআইনি নিয়োগে নেওয়া ঘুষের অংশ বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করছেন ইডির আধিকারিকরা। গত শনিবারই পার্থর পাশাপাশি গ্রেফতার করা হয় অর্পিতাকেও। ১০ আগস্ট পর্যন্ত উভয়কেই ইডির হেফাজত দিয়েছে আদালত। এরই মধ্যেই আবার অর্পিতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকেো কয়েক কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। এদিকে, শুধু এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের যুক্ত তাহাকি নয়, এর সঙ্গে পার্থ-অর্পিতার সম্পর্ক নিয়েও তোলপাড় রাজ্য।
এরই মধ্যে আরও এক নয়া জল্পনা শুরু হয়েছে। ২০১২ সালে অর্পিতার সঙ্গে সিঙ্গাপুর সফরে গিয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়? এমনটাই নাকি শোনা যাচ্ছে। আর সেটাই খতিয়ে দেখছেন ইডি-র আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, সেই সময় রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ২০১২ সালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিদেশ সফরের সঙ্গী ছিলেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। অনেকেই এমন দাবি করছেন। এই দাবি আদতে কতোটা সত্যি, সেটাই এখন দেখছেন ইডি-র তদন্তকারী আধিকারিকরা।
ইডি সূত্রে খবর, তৎকালীন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিদেশ সফর সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য ইডির হাতে এসেছে। অনেকেই সিঙ্গাপুরে একসঙ্গে পার্থ এবং অর্পিতাকে দেখেছেন সেই সময়, এমনটা দাবি করছেন। বিসয়ত্রি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইডি-র এক আধিকারিক এই প্রসঙ্গে এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘কলকাতার এক নামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই বাণিজ্য সম্মেলনের আয়োজন করে। এই ঘটনার সঙ্গে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনও যোগাযোগ নেই। কলকাতার একাধিক ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেই সময় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ও ছিলেন বলে অনেকেই দাবি করেছেন। আমরা পুরো ঘটনার প্রেক্ষিতে তথ্য সংগ্রহ করছি। তবে, আদতে সেই সফরে পার্থর সঙ্গী হিসেবে অর্পিতা ছিলেন কিনা, তা এখনই বলা সম্ভব নয়।’
এখানেই শেষ নয়, ওই ইডি আধিকারিক আরও জানিয়েছেন, ‘গত কয়েকবছরে বেশ কয়েকটি জমির চুক্তি হয়েছে, এই তথ্য সামনে আসছে। বেশ কিছু সম্পত্তির উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। সেই সম্পত্তিগুলি কার? সম্পত্তি কেনার টাকার উৎস কী? খতিয়ে দেখা হচ্ছে সেইসব যাবতীয় বিষয়। নোটবন্দির আগে যে টাকা নেওয়া হয়েছিল তা কোনও জমি বা সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা হয়েছে কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া অর্থ নতুন নোট আসার পর তা জমা করে রাখা হয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে। এটা শুধুমাত্র তিন-চার বছরের ঘটনা নয়।’
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই অর্পিতা ইডি-র জেরায় দাবি করেছেন যে, উদ্ধার হওয়া টাকা তাঁর নয়, সবই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের টাকা। তাঁর লকেরা এসেই রেখে যেত। যে ঘরে টাকা তাখা থাকত, সেখানে তাঁর প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।
এদিকে, গতকালই মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর চারটি দফতরের মন্ত্রিত্ব থেকে সরানো হয়েছে পার্থকে। জানা গিয়েছে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পরিবর্তে সেই চারটি দফতরের মন্ত্রিত্ব সামলাবেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। এই সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে নবান্নের পক্ষ থেকে লিখিত বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এদিকে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারণ প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘আমাদের দল কঠোর। কষ্ট করে রাজনীতি করতে হয়। আমরা পার্থ চ্যাটার্জিকে মন্ত্রিত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছি।’ জানা গিয়েছে, শিল্প-বাণিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, পরিষদীয় এই চার দফতরের মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়েছে রাজ্য সরকার। এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, এই সব দফতরগুলি এখন থেকে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বেই থাকবে।
এর পাশাপাশি বিকেলে দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে, মন্ত্রিত্বের পাশাপাশি দলের যে কোটি পদে ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সেই সবকটি পদ থেকেই তাঁকে সাসপেন্ড করা হল। অভিষেক আরও জানিয়েছেন, যতদিন তদন্ত চলবে তিনি দলের কোনও পদে থাকবেন না। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারলে, দল তাঁকে সসম্মানে ফিরিয়ে নেবে।
আপনার মতামত লিখুন :