বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ সোমবার সপ্তাহের প্রথম দিনেই ভারত বনধের ডাক দিয়েছে কিছু সংগঠন। কেন্দ্রের মোদী সরকারের অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরোধিতা করেই এই বনধ বলে জানা গিয়েছে। এদিকে, এই বনধকে কেন্দ্র করে যাতে সাধারণ মানুষকে কোনোরকম সমস্যা পড়তে না হয়, যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, তার জন্য সমস্ত থানা, জেলা প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।
নবান্নের পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রতিটি ডিভিশনাল কমিশনার, সব থানার আইসি এবং জেলার সুপারদেরও। নবান্নের তরফ থেকে জারি করা এই নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘রাজ্য বনধকে সমর্থন করে না। আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সব রকমের ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিটি সরকারি অফিসে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারি অফিস গুলির ক্ষেত্রেও সমানভাবে নিরাপত্তায় জোর দিতে হবে। কোনভাবেই যাতে কোন জমায়েতের জন্য ট্রাফিকের সমস্যা না হয় সেদিকে বিশেষ নজরদারি চালাতে হবে।’ রবিবারই এই সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়। জারি করেছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
নবান্নের তরফ থেকে স্পষ্ট বলা হয়েছে, কোনও বনধে সমর্থন না করা রাজ্যের নীতিগত সিদ্ধান্ত। কেন্দ্রের মোদী সরকারের ‘অগ্নিপথ’-প্রকল্পের আঁচে পুড়ছে গোটা দেশ। মোদী সরকারের এই প্রকল্প ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই দেশের মধ্যে বিভিন্ন রাজ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে বিক্ষোভ। তা কী এই প্রকল্প? ভারতীয় সেনাবাহিনীতে স্বল্প মেয়াদে চুক্তির ভিত্তিতে সেনা নিয়োগ করা হবে। এই প্রকল্পের অধীনে চলতি বছরে কেন্দ্রের মোদী সরকার ভারতীয় সেনা বাহিনীতে প্রায় ৪৬,০০০ তরুণকে নিয়োগ করবে। যাঁদের নাম দেওয়া হবে ‘অগ্নিবীর’।
কিন্তু এই মুহূর্তে এই প্রকল্পকে কেন্দ্র করে জ্বলছে গোটা দেশ। বিক্ষোভ ক্রমশ বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশের মধ্যে বেশ কিছু রাজ্যে ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে এই আন্দোলন। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, ট্রেনে আগুন লাগানো, রেল অবরোধ চলছে। এই বিক্ষোভের জেরে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেল। ব্যাহত হয়েছে পরিষেবা। সেনায় চুক্তির ভিত্তিতে কাজ পেতে রাজি নয় আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের একটাই দাবি, এই প্রকল্প অবিলম্বে বাতিল করুন কেন্দ্র।
রবিবার এই পরিস্থিতিতে জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন কেন্দ্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। এদিন মন্ত্রকের অধীন ‘ডিপার্টমেন্ট অফ মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স’-এর পক্ষ থেকে লেফটান্যান্ট জেনারেল অনিল পুরী একটি সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘এই সংস্কারের প্রয়োজন ছিল। দীর্ঘদিন ধরে এই সংস্কারের চেষ্টা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীতে তারুণ্যতে জোর দিয়েই এই প্রকল্প। ১৯৮৯ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। সংস্কারের পদক্ষেপ হিসেবেই CDS-এর নিয়োগ করা হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত।’
এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতার মেলবন্ধনেই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আপনারা বিশ্বাস করুন, একজন অগ্নিবীর এবং আমার মধ্যে কিংবা একজন জওয়ানের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। নিয়োগের পর চার বছরের মধ্যে কোনও অগ্নিবীর শহিদ হলে তাঁর পরিবার ১ কোটি টাকা পাবেন।’
কিন্তু কেন্দ্রের এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে সরব চাকরি প্রার্থীদের একটা বড় অংশ। তাঁরা চাইছেন স্থায়ী নিয়োগ এবং অবিলম্বে এই প্রকল্প বন্ধ হোক। তবে, কেন্দ্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, তেমন কোনও সম্ভবনাই নেই। আর টাই এবার ভারত বনধের ডাক দেওয়া হয়েছে এই প্রকল্পের বিরোধিতায়। তবে, রাজ্যে যাতে এই বনধের কোনও প্রভাব না পড়ে, তার কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্যের তরফে।
আপনার মতামত লিখুন :