বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ পোলিওমুক্ত দেশের স্বীকৃতি পায় ভারত। সেই সঙ্গে বাংলাকেও পোলিও মুক্ত রাজ্যেএ স্বীকৃতি মেলে। কিন্তু সেই পোলিওমুক্ত দেশেই এবার শহর কলকাতা থেকে মিলল পোলিওর জীবাণু। তাও আবার ১১ বছর পর। কাজেই স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কলকাতা পুর এলাকার ১৫ নম্বর বোরোর মেটিয়াব্রুজ এলাকায় নজরদারির সময়ই মিলেছে লাইভ পোলিও ভাইরাস বা ভিডিপিভি টাইপ-১। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে যে, পোলিওর ভাইরাস পাওয়ার পরই এলাকায় নজরদারি চালানো শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও পোলিও আক্রান্তের খোঁজ মেলেনি ওই এলাকায়।
স্বাস্থ্য দফতর থেকে আরও জানানো যে, সম্ভবত কোনও ‘ইমিউন ডেফিসিট’ শিহুকে পোলিও ভ্যাকসিন খাওয়ানো হয়েছিল তার শরীরে গিয়েই মিউটেট করে ভাইরাসটি। তারপর খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করার কারণে ভাইরাসটি বাইরের পরিবেশে চলে আসে। এদিকে, এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে কিনা সেই আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় পোলিও রুখতে আরও সতর্কতা অবলম্বন করেছে স্বাস্থ্যভবন। সেই সঙ্গে সতর্ক হয়েছে পুরসভাও। শিশুদের উপরে বিশেষ নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে, সূত্রের খবর, ৩-৪ দিন আগে এই বিষয়ে স্বাস্থ্যদফতরের একটি জরুরি বৈঠকও হয়েছে। ওই বৈঠকে পোলিও ভাইরাস নিয়ে আলোচনা হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম যেসব শিশুদের, তাদের উপর বিশেষ নজরদারি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যদপ্তরের অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী।
১৫ নম্বর বোরোতে লাইভ পোলিওর জীবাণুর হদিশ পাওয়া নিয়ে চেয়ারম্যান রঞ্জিত শীল জানিয়েছেন যে, ‘করোনাকালের আগে গার্ডেনরিচ এলাকায় সেই অর্থে পোলিও আক্রান্ত ছিল না। পাশাপাশি পোলিও টিকাকরণও ঠিকঠাক হচ্ছিল। কিন্তু করোনার সময় এবং লকডাউনে বিভিন্ন কারণবশত গার্ডেনরিচ এলাকায় সেই অর্থে পোলিও টিকাকরণ হয়নি। মানুষকে পোলিও নিয়ে সচেতন করা যায়নি। তাই হয়তো আবার পোলিও ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে।’ তবে তিনি আশ্বস্ত করে এও বলেন, ‘যদিও ইতিমধ্যে কর্পোরেশনের তরফে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা চলছে। পোলিও টিকাকরণের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে।’
পেট খারাপের সমস্যা নিয়ে কোনও শিশু চিকিৎসকের কাছে পৌঁছালে, বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে। কারণ পোলিওর প্রাথমিক উপসর্গ পেটখারাপ। পাশাপাশি পুরসভার কর্মীদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে পোলিও টিকাকরণের গুরুত্ব বোঝানোরও কথা বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যসচিবের নির্দেশে ইতিমধ্যেই দুটি সার্ভেলিয়েন্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার একটিতে রয়েছেন ৫ জন সদস্য। অন্যটিতে ১০ জন। স্বাস্থ্যকর্তারা লাইভ পোলিও ভাইরাস পাওয়া যাওয়ার বিষয়টিকে আপাতত চিন্তার নয় বলেই জানাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২০১১ সালে হাওড়ার এক বালিকার দেহে শেষবার পোলিওর জীবাণু পাওয়া যায়। তবে, এরপর ২০১৪ সালে ভারতকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এখন যদি কলকাতায় বা রাজ্যের কোথাও আবার কোনও পোলিও আক্রান্তের সন্ধান মেলে, তাহলে দেশের ‘পোলিওমুক্ত’ তকমা ঘুচে যেতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :