1. প্রথম পাতা
  2. কলকাতা
  3. রাজ্য
  4. রাজনীতি
  5. অপরাধ
  6. দেশ
  7. আন্তর্জাতিক
  8. খেলা
  9. কর্ম সন্ধান
  10. বিনোদন
  11. ব্যবসা বাণিজ্য
  12. টেক নিউজ
  13. লাইফস্টাইল
  14. ভাইরাল
  15. আবহাওয়া
  16. রাশিফল

নীরবে চলে গেলেন ওআরএস-এর জনক! ৮৮ বছর বয়সে প্রয়াত চিকিৎসক দিলীপ মহলানবিশ

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২২, ০৪:৩১ পিএম

নীরবে চলে গেলেন ওআরএস-এর জনক! ৮৮ বছর বয়সে প্রয়াত চিকিৎসক দিলীপ মহলানবিশ
নীরবে চলে গেলেন ওআরএস-এর জনক! ৮৮ বছর বয়সে প্রয়াত চিকিৎসক দিলীপ মহলানবিশ

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ নীরবেই চলে গেলেন ওআরএস-এর জনক দিলীপ মহলানবিশ। তাঁর হাত ধরেই ডায়রিয়া কিংবা কলেরার মতো রোগে ওআরএসের প্রয়োগের সূচনা। শনিবার রাতে বাইপাসের ধারের এক হাসপাতালে ৮৮ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন দিলীপ মহলানবিশ। চিকিৎসা সাধনা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে জড়িত নানা পরীক্ষামূলক গবেষণার সঙ্গে জড়িত এই মানুষটি দীর্ঘদিন ধরেই নানা অসুখে ভুগছিলেন।

গত বেশ কয়েকদিন ধরেই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন চিকিৎসক দিলীপ মহলানবিশ। যদিও তাঁর অসুস্থতার খবর প্রকাশ্যে আসেনি। এমনকি জানা গিয়েছে যে, কলেরা-ডায়রিয়ার মতো রোগের চিকিৎসায় যার অবদানের সুফল আজ গোটা বিশ্বের মানুষ ভোগ করছেন, সেই চিকিৎসকের পরিচয়ও জানতে পারেননি তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা অনেকেই।

শরীর থেকে জল কমে গেলে বা ডিহাইড্রেশনে মৃত্যু অনিবার্য। এই ধারণা থেকে এবং তাঁর উপস্থিত বুদ্ধিতেই স্যালাইন সূচের মাধ্যমে ধমনীতে প্রবেশ করানোর বদলে পানীয়ের সাহায্যে খাওয়ানো শুরু হয়। নুন-চিনি-বেকিং সোডার জল খাইয়ে আফ্রিকার বহু মানুষের বিশেষ করে শিশুদের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন তিনি।

আবার মুক্তি যুদ্ধের সময়েও বনগাঁ সীমান্তে কলেরায় আক্রান্ত হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচানোর নেপথ্যে এই মহান চিকিৎসকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। অথচ তখনও ওআরএসের প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্বীকৃতি দেয়নি বিশ্ব চিকিৎসার নিয়ামক সংস্থা। তাই ঝুঁকি নিয়েই কাজ করেছিলেন তিনি। পরে অবশ্য স্বীকৃতি পায় ওআরএস।

১৯৫৮ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ডাক্তারি পাশ করে সেখানেই শিশু বিভাগে ইন্টার্নশিপ শুরু করেন দিলীপ মহলানবিশ। এদিকে, ১৯৬০ সালে লন্ডনে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস চালু হতে প্রচুর ডাক্তারের চাহিদা তৈরি হয়। চিকিৎসক দিলীপ মহলানবিশও আবেদন করেন এবং বলাবাহুল্য সুযোগও পেয়ে যান। এরপর লন্ডন থেকেই ডিসিএইচ করেন। এডিনবরা এবং এমআরসিপিও, তারপরে কুইন এলিজাবেথ হসপিটাল ফল চিলড্রেন- এ রেজিস্টার পদে যোগ দেন এই বাঙালি দক্ষ চিকিৎসক। সেই সময় তাঁর বয়স মাত্র ২৮ বছর। উল্লেখ্য, ঐ পদেও তিনিই প্রথম ভারতীয়।

এরপর আমেরিকার জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির মেডিক্যাল কেয়ার ফেলো পদে যোগ দেন দিলীপ মহলানবিশ। তৎকালীন সময়ে ঐ প্রতিষ্ঠানের একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র ছিল বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। সেখানে কলেরা আক্রান্তদের চিকিৎসা হত। ১৯৬৪ সালে দেশে ফিরে দিলীপ মহলানবিশ সেখানেই যোগ দেন। শুরু করেন ওআরএস এবং স্পেশাল মেটাবলিক স্টাডি নিয়ে গবেষণার কাজ। হাতেকলমে তাঁর গবেষণার সাফল্য পাওয়া সত্ত্বেও গবেষণাপত্র বার করা হয়ে ওঠেনি। এরপরেই ঘটে ১৯৭১ সালের ওই উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ থেকে আসা লক্ষাধিক মানুষ এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন এপার বাংলার অস্থায়ী শিবিরে। সেই সব শিবিরে আচমকাই মড়ক লাগে কলেরার। ধীরে ধীরে তা মহামারির আকার নেয়। সেই কঠিন পরিস্থিতিতে মাত্র কয়েকজনকে সঙ্গী করে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন চিকিৎসক দিলীপ মহলানবিশ। চিকিৎসার পাশাপাশি শুরু হয় এক লড়াই। দু’মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর আসে কাঙ্খিত সাফল্য। সুস্থ হয়ে উঠতে শুরু করেন কলেরা আক্রান্তরা।

এরপরই এই চিকিৎসা পদ্ধতির বিষয়ে বিশদ তথ্য দিয়ে ওআরএসের প্রয়োগ নিয়ে পেপার লেখেন। ১৯৭৩-এ জন হপকিনস মেডিক্যাল জার্নালে তা প্রকাশিতও হয়। পরে ‘ল্যানসেট’ পত্রিকাও স্বীকৃতি দেয় ওই গবেষণালব্ধ পর্যবেক্ষণকে। কলেরা কিংবা ডায়েরিয়া রোগে আর আইভি-র (ইন্ট্রাভেনাস) পরিবর্ত পদ্ধতি হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি পায় ওআরএস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফ থেকে ডাক আসে তাঁর।

উল্লেখ্য, ১৯৮০-র মধ্যপর্ব থেকে ১৯৯০-এর প্রথম পর্যায় পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডায়রিয়া ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম-এর মেডিক্যাল অফিসার ছিলেন তিনি। ১৯৯০-এ বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়ারিয়াল ডিজিজ রিসার্চ-এর ক্লিনিক্যাল সায়েন্সের ডিরেক্টর হন। পরে ১৯৯৪-এ রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স-এর সদস্য নির্বাচিত হন। পার্ক সার্কাসে ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ-এও যুক্ত ছিলেন।

দিলীপ মহলানবিশ জন্মেছিলেন অবিভক্ত বাংলার কিশোরগঞ্জে। দেশভাগের সময় পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। কাজের জন্য বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন। ২০০২ সালে পান পলিন পুরস্কার। পরে ২০০৬ সালে পান প্রিন্স মাহিডল অ্যাওয়ার্ড। ১৯৯১ সালে সল্টলেকে নিজের বাড়িতে ‘সোসাইটি ফর অ্যাপ্লায়েড স্টাডিজ়’ও তৈরি করেন। ডাক্তারি পাশ করা ছেলেমেয়েদের হাতেকলমে গবেষণা এবং ফিল্ডওয়ার্ক শেখানোর উদ্যোগে। উদ্দেশ্য ছিল ঠিক যেভাবে তিনি নিজে চিকিৎসক হিসাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন, সেভাবেই ডাক্তারির ছাত্র-ছাত্রীদের শেখাতে চেয়েছিলেন হাতেকলমে। কিন্তু, দুঃখের বিষয় তাঁর সেই শিক্ষা নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থী তিনি পাননি। এ বিষয়ে তাঁর আফসোস ছিল যে, এর জন্য কোনও সরকারি সাহায্যও পাননি তিনি। 

১৯৯৪ সালে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেসের বিদেশি সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন মহান বাঙালি চিকিৎসক দিলীপ মহলানবিশ। প্রচারবিমুখ মানুষটি নিজের কাজের প্রচারের আলোয় আনতে পারেননি। শেষের দিকে কয়েকটা বছর আর রোগী দেখতেন না। ক্রমশ নানা অসুস্থতার কারণে শরীর ভাঙছিল। আর এবার বাংলার এই কৃতী চিকিৎসকের জীবনাবসানও হল প্রচারের আলোর আড়ালেই। তবে, তিনি চলে গেলেও, রয়ে গেল তাঁর আবিষ্কার। যা আগামীদিনেও কলেরা-ডায়রিয়ার মতো রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে জীবনদায়ী ওষুধ হিসেবে কাজ করে যাবে।

আরও পড়ুন