বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ রাজ্য নিয়োগ দুর্নীতিতে তোলপাড়। এর মধ্যেই এদিন রাজ্যে ফের নিয়োগের আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নার্স-চিকিৎসক মিলিয়ে এই মুহূর্তে প্রায় ১০ হাজার শূন্যপদ রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না। এদিন নবান্নে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে এমনটাই জানালেন স্বাস্থ্যসচিব। তার পরিপ্রেক্ষিতেই এদিন মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত স্বাস্থ্য পরিষেবায় শূন্যপদ পূরণের কথা বলেন। পাশাপাশি তিনি এও জানান যে, সরকারের নিয়মের কোনও অন্যথা হবে না এক্ষেত্রে।
এদিন নবান্নের বৈঠকে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবায় একাধিক গাফিলতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড প্রত্যাখ্যান এবং এর অপব্যবহার থেকে শুরু করে রোগী রেফারের সমস্যা নিয়েও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জেলা থেকে ক্রমাগত রোগী রেফার নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। জেলা হাসপাতালের উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘রেফার করা আপনারা কবে বন্ধ করবেন? প্রসূতিদেরও রেফার করা হচ্ছে।’ প্রসববেদনা নিয়ে ৩-৪ ঘণ্টার রাস্তা পার করার জেরে বহু প্রসূতির মৃত্যু হচ্ছে বলেও এদিন দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, ‘সবকিছু আমাকে বলে দিতে হবে? নিজের কাজ নিজেকে বুঝে নিতে হবে। কোনও লবিবাজি চলবে না।’
এদিনের বৈঠক থেকে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে কড়া হওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি। এদিন স্বাস্থ্যসচিবকে গাফিলতির বিরুদ্ধে কড়া হওয়ার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘তুমি খুব উইক। স্ট্রং হও। প্রয়োজনে নরম আবার প্রয়োজনে কড়া হও।’ মাঝেমধ্যেই হাসপাতালে সারপ্রাইজ ভিজিট করারও নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্য সচিবের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে হাসপাতালে সারপ্রাইজ ভিজিট করো। ফেয়ার প্রাইস শপে যাও। সাধারণ মানুষের লাইনে দাঁড়াও।’ এছাড়াও এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রেফার করলে রোগীর মৃত্যু হলে, যে রেফার করেছেন দায়িত্ব তাঁর। এদিন মুখ্যমন্ত্রীকে নারায়ণস্বরূপ নিগম জানান, রেফার রোগ আগের চেয়ে অনেকটাই কমেছে রাজ্য। ৮ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৪ শতাংশ।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতাল, হাসপাতালের পরিকাঠামোর মতো একাধিক বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। তাঁর কথায়, বারবার উঠে আসে যে, কোনোভাবে রোগী যেন সব ধরনের উপযুক্ত চিকিৎসা পান, সেক্ষেত্রে যেন কোনও গাফিলতি না হয়। তেমনটা হলে বরদাস্ত করা হবে না। এই বিষয়ে অবশ্য এর আগেও বহুবার সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
অন্যদিকে, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প নিয়েও প্রশাসনের কড়া অবস্থান স্পষ্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় থাকার পরেও অনেক বেসরকারি হাসপাতাল কেন স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা দিচ্ছেন না সাধারণ মানুষকে, এই অভিযোগ নিয়ে কড়া ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যসচিবকে। প্রসূতি মৃত্যু নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা৷
পাশাপাশি, মমতাকে এ দিন বলতে শোনা যায় যে, জেনেরিক ওষুধ থেকে শুরু করে অনেকে বেসরকারি হাসপাতালে বৈআইনিভাবে বিল নেওয়ার কথা বলা হয়৷ আর তাতেই আরও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বললেন, ‘আপনারা ধরুন না৷ এরকম বিল করলে আপনারা ধরুন৷ ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীর টুথ পেস্টের টাকা নেওয়া হলে তার পাঁচ হাজার গুণ ফাইন নিন, তা হলে ঠিক হয়ে যাবে৷’ এদিন বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী কলকাতার এনআরএস ও এসএসকেএম হাসপাতালে শিশুদের হার্টের অপারেশন চালু করার পরামর্শ দেন। যাতে করে শিশুসাথী কার্ডের টাকা বেসরকারি হাসপাতালে না যায়।
আপনার মতামত লিখুন :