বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ববিতার পর এবার প্রিয়াঙ্কা সাউ, দুর্গাপুজোর চতুর্থীর দিন আদালতের দ্বারস্থ হওয়া যোগ্য চাকরিপ্রার্থীকে নিয়োগের নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এর ফলে এসএসসি-তে যোগ্যতা প্রমাণ করা সত্ত্বেও চাকরি না পাওয়ার বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেলেন আরও একজন যোগ্য চাকরিপ্রার্থী। হাইকোর্টের নির্দেশে তিনি এবার স্কুল শিক্ষিকার চাকরি পেতে চলেছেন।
একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় উপযুক্ত নম্বর থাকার পরেও চাকরি পেয়েছিলেন না প্রিয়াঙ্কা। শুধু তাই নয়, তাঁর থেকে কম নম্বর পেয়ে অনেকেই চাকরি করছেন, এই মর্মে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। এদিন এই মামলা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চে ওঠে। এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন যে, ২৮ অক্টোবরের মধ্যে চাকরির নিয়োগপত্র দিতে হবে। আর তার আগে ১১ থেকে ২১ অক্টোবরের মধ্যে কাউন্সেলিং সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কাউন্সিলিং- এর সময় বাড়ির কাছাকাছি তিনটি স্কুল নির্বাচন করার সুযোগ দিতে হবে প্রিয়াঙ্কা সাউকে। এমনটাই জানিয়েছে আদালত।
বিচারপতির এদিনের নির্দেশের ফলে, প্রিয়াঙ্কা সাউ নিজের বাড়ির কাছের যে কোনও একটি স্কুলেই একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দিতে পারবেন পুজোর পরই। এই খবরে প্রিয়াঙ্কা খুশি হলেও, তিনি কিন্তু আবেগে ভেসে যাননি। উল্টে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর এই দীর্ঘ আন্দোলন সফল হওয়ার পুরো কৃতিত্বই দিচ্ছেন আদালত ও বিচার ব্যবস্থাকে।
এসএসসি-তে যোগ্য প্রার্থীর চাকরি পাওয়া নিয়ে কোচবিহারের ববিতা সরকারের আইনি লড়াই আগেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই লড়াই ছিল অঙ্কিতা অধিকারী বনাম ববিতা সরকার। মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতার চাকরি বাতিল হয়ে, মেখলিগঞ্জের ওই স্কুলেই ওই পদেই ইতিমধ্যেই চাকরি পেয়েছেন ববিতা।
ববিতার সেই মামলার সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়েছিলেন আরও ২০ জন চাকরি প্রার্থী। তাঁদেরও সকলেরই একই অভিযোগ ছিল। এসএসসি-তে কম নম্বর পাওয়ার পরেও অন্যান্যরা চাকরি পেলেও, তাঁরা যোগ্য হয়েও বঞ্চিত হয়েছেন। এই ২০ জনের তালিকাতেই ছিলেন প্রিয়াঙ্কা সাউ। মেধাতালিকায় বেশি নম্বর পেয়েও, চাকরির নিয়োগপত্র হাতে পাননি তিনি। এর আগে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল যে, ২০১৭ সালের মেধাতালিকা অনুযায়ী, মূলত মহিলা ক্যাটাগরিতে ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নম্বরের নিরিখে অন্যদের তুলনায় প্রিয়াঙ্কার নম্বর কম থাকায়, তাঁকে চাকরি দেওয়া সম্ভব হয়নি। সেই কারণেই তাঁকে ওয়েটিং লিস্টে রাখা হয়েছিল।
এর আগে এই মামলায় ২৩ সেপ্টেম্বর একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ মামলার শুনানিতে হাইকোর্টের বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য করেছিলেন যে, আদালত মনে করছে, এই নিয়োগের যৌক্তিকতা আছে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবীকে বলেন, আবেদনকারী এবং তাঁর আইনজীবীকে নিয়ে আলোচনা করে আদালতকে পরবর্তী সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে। বিচারপতির প্রস্তাবে কমিশন সময় চাইলে, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘পুজোর আগে চাকরি দিন। এঁরা অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করছেন।’
এদিন ফের এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় স্পষ্ট বলেন, প্রিয়াঙ্কা সাউ যোগ্য প্রার্থী। তাঁকে বাড়ির কাছেই তিনটি স্কুলের মধ্যে যেকোনো একটি স্কুল বেছে নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এই মর্মেই কমিশনকে নির্দেশ দেন বিচারপতি। এদিন আদালতের রায় শোনার পর প্রিয়াঙ্কা সাউ বলেন যে, ‘আন্দোলন করেও যখন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছিল না, তখন আদালতের দ্বারস্থ হই। আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে মামলা করি। ২০১৭ সালে পরীক্ষার পর ইন্টারভিউয়ের ডাক পাই। তবে, আমার চেয়ে কম নম্বর পেয়ে একজন চাকরিতে যোগ দেয়, আমি দিতে পারিনি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করি। আদালতের নির্দেশে চাকরি পেয়ে খুব ভাল লাগছে। আদালতের উপর বরাবর ভরসা ছিল, এখনও আছে।’
আপনার মতামত লিখুন :