বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ২০১০ সালের পর ভয়ঙ্কর বন্যার সম্মুখীন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান। বন্যার কবলে পড়ে ১১০০-র বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন এখনও পর্যন্ত। মৃত্যু হয়েছে ৭ লক্ষের বেশি গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। এখানেই শেষ নয়,, ভয়ঙ্করতার আর বাকি। ফসল নষ্ট হওয়ার জেরে এই মুহূর্তে চূড়ান্ত খাদ্য সংকটে পাকিস্তান।
এমনিতেই মূল্যবৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি আগে থেকেই ছিল সেদেশে। এবার পাকিস্তানের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা নেমে এসেছে ভয়াবহ বন্যার কারণে। ভারি বৃষ্টির এবং হড়পা বানে সেখানে চূড়ান্ত প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ গিয়ে পৌঁছেছে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৭৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকায়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালেও এমনই ভয়ঙ্কর বন্যা হয়েছিল পাকিস্তান। সেবার বন্যার জেরে প্রায় ২ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু সেদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বলছে, এবারের বন্যা বিপর্যয় কাটিয়ে, আগের মতো অবস্থায় ফিরে আসতে কমপক্ষে ৫ বছর সময় লাগবে পাকিস্তানের। এমনটাই মনে করা হচ্ছে। আবার সেটা তখনই সম্ভবপর হবে, যখন আন্তর্জাতিক মহল থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ সাহায্য এসে পৌঁছাবে।
জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে বন্যায় পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের অবস্থা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। সেখানে ফসলের জমি একটিও বেঁচে নেই। পরিসংখ্যান বলছে, সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৭ লক্ষ ২৭ হাজার ১৪৪টি গরু-বাছুর মারা গিয়েছে বন্যার জেরে। এর মধ্যে পাকিস্তানের বালুচিস্তানেই ৫ লক্ষ গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। খাইবার-পাখতুনখোয়ায় ৮ হাজার ৭৭১, পঞ্জাব প্রদেশে ২৩ হাজার এবং সিন্ধে ১৫ হাজার গবাদি পশু মারা গিয়েছে।
এদিকে, গবাদি পশুর মৃত্যুর জেরে দুধ, দই, দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্য এবং মাংসের ঘাটতি দেখা দিয়েছে গোটা দেশজুড়ে। উল্লেখ্য, গবাদি পশুপালনের উপর পাকিস্তানের গ্রামাঞ্চলের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষের জীবিকা নির্ভর করে। কিন্তু এখন আয়ের পথ সম্পূর্ণ বন্ধ। অর্থাৎ ৮০ লক্ষ পরিবার উপার্জনহীন, কর্মহীন। পাকিস্তানের এই বন্যার কারণে সেদেশের ৩ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত।
পাকিস্তানের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইতিমধ্যেই তিনি টুইট করে লিখেছেন, ‘বন্যায় বিপর্যস্ত পাকিস্তানের পরিস্থিতি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। পীড়িত পরিবার, আহত মানুষ এবং ক্ষতিগ্রস্ত সকলকে সমবেদনা জানাই। আশাকরি দ্রুত এই বিপর্যয় কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে দেশ।’
অন্যদিকে, এই বন্যার আরও একটা ভয়ঙ্কর দিক সামনে এসেছে। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে পাকিস্তানে মূদ্রাস্ফীতিও অতি খারাপ এবং ভয়াবহ জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। শাক-সব্জি থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসের দামই আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছে। এই প্রসঙ্গে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ্ ইসমাইল জানিয়েছেন, শাক-সব্জি এবং খাদ্যপণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি পাকিস্তানের সরকার জানিয়েছে যে, এই মুহূর্তে বন্যার জেরে তিল, টমেটো, লঙ্কা, খারিফ শস্য এবং পেঁয়াজের জমির ৫০ শতাংশই জলের নীচে চলে গিয়েছে। শুধু যে ফসলের জমি নষ্ট হয়েছে তাই নয়, রাস্তা, সেতু, পরিকাঠামোর অধিকাংশই জলের নীচে চলে গিয়েছে। এর সঙ্গে আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছনে যে, বর্ষা শেষ হতে হতে দেশের এক তৃতীয়াংশ জলের তলায় চলে যাবে।
জানা গিয়েছে, পাকিস্তানকে অর্থ সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১৬ কোটি মার্কিন ডলার তোলার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে তারা। এছাড়াও ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। অন্যদিকে, তুরস্ক, চিন, কানাডা এবং কাতারের মতো দেশ অর্থ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তানের দিকে।
তবে, এখনও দিল্লির কাছে পাকিস্তানের তরফ থেকে সাহায্যের আবেদন এসে পৌঁছয়নি বলে কূটনৈতিক সূত্রে খবর। ২০১০ সালে পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যায় অবশ্য ভারত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। এমনকি ২০০৫ সালের ভূমিকম্পের সময়ও পাকিস্তানের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিল ভারত।
আপনার মতামত লিখুন :