বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ তিনি রয়েছেন, দেশবাসীর সবথেকে বড় অভিভাবকও তিনি। কিন্তু এতো কিছুর পরেও তিনি একেবারে অন্যরকম। তিনি যে আসলে মাটির মানুষ, আমজনতার খুব কাছের একজন- তা আবারও একবার বুঝিয়ে দিলেন দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। ভিআইপি নিরাপত্তা, গাড়ি এসব ব্যবহার না করে আর পাঁচজন সাধারণ ভক্তের মতোই নম্বা রাস্তা পায়ে হেঁটে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে পৌঁছালেন। মন্দিরে আগত সাধারণ পুণ্যার্থীদের মতো ভক্তিভরে পুজোও দিলেন। তবে, শুধু রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন দেহরক্ষী।
দেশের রাষ্ট্রপতিকে এভাবে দেখে স্বাভাবিকভাবেই আপ্লুত জগন্নাথ মন্দিরের সকলে এবং সাধারণ মানুষও। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর এই ছবি ছড়িয়ে পড়তেই দেশের অনগ্রসর শ্রেণির প্রথম সর্বোচ্চ নাগরিকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সকলেই।
তবে, রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে প্রস্তুতির কমতি ছিল না। দেশের রাষ্ট্রপতি আসছে বলে কথা! তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি যেমন খুবই গুরুত্বপূর্ণ তেমনই ব্যবস্থাপনাও আরও নিখুঁত করার দিকেও নজর ছিল পুরীর জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষের। প্রভু জগন্নাথকে পুজো দিতে তাঁর যাতে কোথাও কোনওরকম সমস্যা না হয়, তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পুরীর গ্র্যান্ড রোডে বৃহস্পতিবার দীর্ঘ সময় ধরেই ট্রাফিক প্রায় বন্ধ রাখা হয়েছিল রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর আগমন উপলক্ষে। প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা ব্যারিকেড করে ঘেরা ছিল। সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত এই রাস্তা দিয়ে সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ।
কিন্তু তিনি আসার পরেই সকলের হৃদয় জিতে নিলেন। সকলকে চমকে দিয়ে রাষ্ট্রপতি মুর্মু নিজের বিলাসবহুল গাড়ি থেকে নেমে আসেন। এরপর দেহরক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে ব্যারিকেড ঘেরা রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে মন্দিরে ঢোকেন। তাঁর পরনে ছিল ঐতিহ্যবাহী সম্বলপুরী সিল্কের শাড়ি। ঘিয়ে রঙের শাড়িতে তুঁতে পাড়। চলার পথে দুপাশে থাকা মানুষদের উদ্দেশ্যে হাতজোড় করে নমস্কার করলেন, হাত মেলালেন ছোট ছোট স্কুল ছাত্রীদের সঙ্গেও। একেবারে কাছের মানুষের মতোই।
এরপর জগন্নাথ মন্দিরে পৌঁছে তিনি নিয়ম মেনে পুজো দেন- জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাকে। পুজো দেওয়া শেষ হলে, পুরীর রাজ পরিবারের সঙ্গে রাজভবনে মহাপ্রসাদ গ্রহণ করেন। তারপরে পূর্বপরিকল্পিত সূচি মেনে ভুবনেশ্বরে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক, রাজ্যপাল গণেশী লাল সঙ্গে দেখা করেন। পরে পুরীর মন্দির কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, রেজিস্টার বুকে প্রেসিডেন্ট লিখেছেন যে, ‘মন্দিরের পবিত্র গর্ভগৃহে দেবতাদের দর্শন করে খুব খুশি। দেশ-দশের কল্যাণের জন্য পুজো দিয়েছি। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে প্রার্থনা করেছি।’ আসলে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সবার সঙ্গে মিলেমিশে গোটা জীবন অতিবাহিত করেছেন। তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারে অভাবনীয় সাফল্যের পরেও, সেই ধারায় কোনও পরিবর্তন হয়নি, টান কখনও ছিন্ন হয়নি। তাই তো পুরীর মন্দির যাওয়ার পথে দেশের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি নিজেকে সাধারণ পুণ্যার্থী হিসেবেই নিজেকে তুলে ধরলেন সকলের সম্মুখে।
আপনার মতামত লিখুন :