বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী পদে বসার পর থেকেই তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রী নন, বরং গরীবের সেবক বলেই পরিচয় দিয়ে এসেছেন। সরকারের ৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে হিমাচল প্রদেশের সিমলায় ‘গরীব কল্যাণ সম্মেলনে’ অংশগ্রহণ করে, ভাষণ দিতে গিয়ে আবারও একবার সেই কথাই বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
তিনি জানিয়েছেন, কিছু কিছু সময় তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা পালন করতে হয় ঠিকই। যখন সরকারি ফাইলে স্বাক্ষর করার দরকার পড়ে। কিন্তু বাকি সময় তিনি আর পাঁচজনের মতোই সাধারণ মানুষ। দেশের ১৩০ কোটি মানুষের মধ্যেই একজন। তিনি এও জানিয়েছেন যে, শুধুমাত্র ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদীই নন, পুরো মোদী সরকারই এই একই মন্ত্রেই চলে। এদিন তিনি বলেন, ‘যখন একাধিক ফাইলে সই করতে হয় তখন পদে থাকার জন্য সেগুলি স্বাক্ষর করি। কিন্তু, ফাইলগুলি আমার দফতর থেকে চলে গেলেই আমি আর নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনে করি না। আমি প্রধানমন্ত্রী নই, ভারতের সেবক।’ প্রধানমন্ত্রীর সংযোজন, ‘১৩০ কোটি ভারতীয়ের পরিবারের সদস্য আমি। প্রত্যেক ভারতীয়র মান, সম্মান, মর্যাদা রক্ষা করা আমার কাজ। তাঁদের সুরক্ষা আমার দায়িত্ব।’
এদিনের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পূর্ববর্তী সরকারকে আক্রমণ করতেও ছাড়েননি। তিনি জানিয়েছেন, পূর্ববর্তী সরকারগুলির মতো তাঁর সরকার সাধারণ মানুষের ‘মাই-বাপ’ হয়ে থাকেনি। তাঁর সরকার উল্টে ‘জনতা জনার্দনের সেবক’ হয়েছে। সরকারের ৮ বছর পূর্তিতে ইউপিএ সরকারকে আক্রমণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোথা থেকে শুরু করেছিলাম, তা মনে রাখা দরকার। তাহলেই কোথায় পৌঁছেছি তা উপলব্ধি করা যাবে।’ এরপরই তিনি ইউপিএ শাসনকালের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘২০১৪-র আগে লুঠ, দুর্নীতি, পরিবারতন্ত্র, আটকে যাওয়া প্রকল্প-এসবে খবরের হেডলাইন ভরে থাকত। সরকার দুর্নীতিকে সরকারি ব্যবস্থার অংশ বানিয়ে ফেলেছিল। দুর্নীতির বিরদ্ধে লড়াইয়ের পরিবর্তে, তার সামনে মাথা নত করেছিল। সরকারি প্রকল্পগুলির অর্থ, সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছানোর আগেই লুঠ হয়ে যেত। অর্থের অভাবে দরিদ্ররা চিকিৎসা পেতেন না।’
এদিন সিমলার অনুষ্ঠান থেকেই প্রধানমন্ত্রী জানান, মোদী সরকারের ৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে সরকার একদিকে করোনা মহামারীতে অনাথ হওয়া শিশুদের পাশে দাঁড়িয়েছে, অন্যদিকে দেশের ১০ কোটির বেশি কৃষককে ‘পিএম কিষাণ নিধি’র সাম্প্রতিক কিস্তির অর্থ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাকালে অনাথ শিশুদের পাশে দাঁড়াতে পেরে ভালো লাগছে। ১৩০ কোটি ভারতীয়র সেবক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি ধন্য। ১৩০ কোটি ভারতবাসীর পরিবারের সদস্য হয়ে উঠতে পেরে আমি গর্বিত।’ উল্লেখ্য, সিমলা থেকেই এদিন প্রধানমন্ত্রী কিষাণ নিধি যোজনার অর্থ বিলি করলেন। মোট ১০ কোটি কৃষকের অ্যাকাউন্টে ২১ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হল।
এদিন প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন যে, তাঁর সরকারের আমলে পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে চর্চা হয় সরকারি প্রকল্প থেকে পাওয়া সুবিধা নিয়ে। চর্চা হয় গরীব মানুষের অ্যাকাউন্টে সরাসরি অর্থ পৌঁছানো নিয়ে। গোটা বিশ্বে আলোচনা চলে ভারতের স্টার্টআপ সংস্থাগুলির বিকাশ ও অগ্রগতি নিয়ে। বিশ্বব্যাঙ্কও ভারতে ব্যবসা করার স্বাচ্ছন্দের বিষয়ে চর্চা করে। দেশের মানুষ আলোচনা করেন অপরাধীদের জব্দ করার বিষয়ে সরকারের শক্তি নিয়ে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে।’
এখানেই শেষ নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এদিন ভাষণে আরও বলেন যে, সরকারি ব্যবস্থায় দুর্নীতি তাঁরা রুখে দিয়েছেন জনধন, আধার এবং মোবাইলের মাধ্যমে। মোদীর কথায়, দেশের গরীব মানুষ আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সুবিধা পায়, দেশের সুরক্ষার বিষয়ে সার্জিকাল স্ট্রাইক, এয়ার স্ট্রাইক নিয়ে দেশের মানুষ গর্ব বোধ করে। প্রধানমন্ত্রী আরও দাবি, তাঁর সরকার সরকারি ব্যবস্থাকে দেশের গরীব মানুষের জন্য কল্যাণমুখী করে তুলেছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চলতি বছরের শেষেই রয়েছে হিমাচল প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এদিন হিমাচল প্রদেশের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগের কথাও আলাদা করে ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, ভোকাল ফর লোকালের মতো প্রচারের মাধ্যমে কেন্দ্রের সরকার হিমাচল প্রদেশের সমৃদ্ধ হস্তশিল্পগুলিকে দেশে এবং দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হয়েছে। এছাড়াও সরকারের নয়া শিক্ষা নীতির কারণে হিমাচলের শিক্ষার্থীরা এখন মাতৃভাষাতেও মেডিক্যাল এবং প্রযুক্তির পাঠ নিতে পারবেন। পাশাপাশি এদিন প্রধানমন্ত্রী হিমাচল প্রদেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে ড্রোন পরিষেবা পৌঁছে দেওয়রাও আশ্বাস দিয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :