বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ ৬ বছরেরও বেশি সময় সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি হিসেবে কাজ করার পর বুধবার ভারতের ৫০ তম প্রধান বিচারপতি হিসাবে শপথ নিলেন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। বুধবার সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে তিনি শপথবাক্য পাঠ করলেন। ৪৪ বছর আগে তাঁর বাবা বিচারপতি ওয়াই ভি চন্দ্রচূড়ও ভারতের প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। সেদিক থেকে দেখতে গেলে, পিতা-পুত্র জুটি হিসেবে ভারতের বিচারবিভাগীয় ইতিহাসে দৃষ্টান্ত রচনা করলেন তাঁরা।
দেশের সদ্য প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বাবা ওয়াই ভি চন্দ্রচূড় ছিলেন ভারতের সবচেয়ে বেশিদিন থাকা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। প্রায় ৭ বছরের বেশি সময় তিনি ওই দায়িত্বে ছিলেন। এবার সেই পদ অলঙ্কৃত করছেন ছেলে ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।
এন ভি রামানার প্রধান বিচারপতি হিসেবে মেয়াদ ফুরানোর পর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হন বিচারপতি ইউ ইউ ললিত। গত অক্টোবরেই কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে আগামী স্থায়ী প্রধান বিচারপতির নাম জানতে চাওয়া হয়েছিল। সেই সময় তিনি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নাম প্রস্তাব করেন। সুপ্রিম কোর্টের অন্য বিচারপতিদের উপস্থিতিতে তিনি চিঠি দেন।
এরপর সেই প্রস্তাবকে মান্যতা দিয়ে চন্দ্রচূড়কেই নিযুক্ত করা হল দেশের পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হিসেবে। আগামী ২ বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের প্রধান বিচারপতি পদে থাকবেন চন্দ্রচূড়। দেশের সদ্য প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বাবা ওয়াই ভি চন্দ্রচূড় এই পদে ছিলেন ১৯৭৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৮৫ সালের ১১ জুলাই পর্যন্ত।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৫৯ সালের ১১ নভেম্বর মুম্বইয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড়। নয়া দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স-সহ বিএ পাস করেছিলেন ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। ১৯৮২ সালে তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ল সেন্টার থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ১৯৮৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ল স্কুল থেকে জুরিডিকাল সায়েন্সেস বিষয়ে এলএলএম ডিগ্রি এবং ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
শীর্ষ আদালত এবং বম্বে হাই কোর্টে আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিস করার পরে ১৯৯৮ সালে দেশের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল হন তিনি। এরপর ২০০০ সালে বম্বে হাই কোর্টের বিচারপতি হন। ২০১৩ সালে এলাহাবাদ হাই কোর্টেের প্রধান বিচারপতি পদে আসীন হন চন্দ্রচূড়। এরপর ২০১৬ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে উন্নীত হন ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড়।
বরাবরই স্পষ্টবক্তা হিসেবে পরিচিত চন্দ্রচূড় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য রায় দিয়েছেন। শবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশ নিয়ে মামলার শুনানিকারী বেঞ্চের অংশ ছিলেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। তিনি বলেছিলেন, ‘শবরীমালা মন্দিরে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মহিলাদের প্রবেশাধিকার না দেওয়া সাংবিধানিক নৈতিকতা লঙ্ঘনকারী।’ আবার সমকামী সম্পর্ককে অপরাধের আওতা থেকে বের করার ঐতিহাসিক রায়দানকারী বেঞ্চেও ছিলেন ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। অযোধ্যার রাম জন্মভূমি বিতর্ক মামলার শুনানিকারী পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চেও ছিলেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। সম্প্রতি অবিবাহিত মহিলাদের গর্ভপাতের অধিকার মামলার রায়ও দিয়েছে তাঁর নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের এক বেঞ্চ।
আপনার মতামত লিখুন :