বংনিউজ ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সমাজের এক বৈষম্যমূলক প্রথা ভাঙলেন রাজস্থানের এক তরুণ। তবে, একার সাহসে হয়নি। পাশে পেয়েছেন প্রশাসনকে। প্রশাসন সঙ্গ দিয়েছে বলেই উচ্চবর্ণের লোকজনের পাড়া দিয়ে ঘোড়ায় চেপে বিয়ে করতে গেলেন। যা কল্পনাও করতে পারেননি দলিত তরুণ শ্রীরাম মেঘওয়াল। যেখানে উঁচু জাতের পাড়া দিয়ে জুতো পায়ে যাওয়ারও উপায় নেই, সেখানে এই প্রথম ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে গেলেন বছর ২৭ এর যুবক শ্রীরাম। সেই সঙ্গে এত বছরের এই প্রথা ভাঙল চাদি গ্রাম।
নিজের বিয়ে উপলক্ষে একটা সাদা ঘোড়া ভাড়া করেছিলেন মেঘওয়াল। সাদা শেরওয়ানি, মাথায় পাগড়ি, কোমরে ঝোলানো ছিল তরোয়াল। কাছে অস্ত্র থাকলে কী হবে, বরকে ঘিরে এবং চোখে চোখে রেখেছিল পুলিশ। রাস্তার দু’ধারে বাড়িগুলির উপরেও নজর রেখেছিল পুলিশের আরও একটি দল। গ্রামের রাস্তা দিয়ে ডিজে বাজিয়ে বিয়ে করতে বেরিয়েছিলেন দলিত তরুণ।
এভাবে এতদিনের এই বৈষম্যমূলক প্রথা ভাঙতে পেরে বেজায় খুশি শ্রীরাম ও গ্রামের দলিত মানুষজন। সংবাদমাধ্যমের সামনে মেঘওয়াল বলেন, `আমাদের গ্রামের আমিই প্রথম বর যে ঘোড়ায় চেপে বিয়ে করতে গেল। এরপর হয়তে এমন ধারণা বদল হবে যে, দলিতরা নীচু জাত তাদের নীচেই দাবিয়ে রাখো।’
এই প্রথা ভাঙার চেষ্টা এই প্রথম নয়। এর আগেও এই দুসাধ্য সাধনের চেষ্টা হয়েছে। তবে, সেক্ষেত্রে বরের ভাগ্য শ্রীরামের মতো ভালো ছিল না। ভাগ্য সদয় হয়নি মধ্যপ্রদেশে এক দলিত যুবকের বেলায়। রাজ্যের সাগর জেলার গানিয়ারি গ্রামের দলিত তরুণ দিলীপ আহিরয়ার বিয়ে করতে বেরিয়েছিলেন ঘোড়ায় চেপে। পুলিশের প্রহরাও ছিল। কিন্তু গ্রাম থেকে বেরিয়ে যেতেই তার বাড়িতে হামলা চালায় উচ্চবর্ণের লোকজন। বাড়ি ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হয়। ভাঙা হয় বরযাত্রীদের একটি গাড়িও।
দলিতদের উপরে অত্যাচারের ঘটনা গো-বলয়ে আকছার ঘটনা, এটা নতুন কোনও ঘটনা নয়। উচ্চবর্ণের মানুষদের সামনে দিয়ে জুতো পায়ে হাঁটা যাবে না। কোনও উচ্চবর্ণের মানুষের সামনে দিয়ে যেতে গেলে জুতো মাথায় করে হাঁটার প্রথা এখনও দেখা যায় রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে। আর ঘোড়ায় চেপে বিয়ে! সেতো ভাবাও অন্যায়। এরকম করতে গিয়ে মারধরের ঘটনাতো বটেই খুনোখুনির ঘটনাও ঘটেছে অতীতে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি রাজস্থান পুলিশের একটি হিসেব বলছে, গত ১০ বছরে ৭৬টি ঘটনায় ঘোড়ায় চেপে বিয়ে করতে যাওয়া বরকে মেরে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মেঘওয়ালের বিয়ের ঘটনা নিয়ে জেলার পুলিশ সুপার জয় যাদব সংবাদমাধ্যমে বলেন, এরকম আরও অনেক গ্রাম রয়েছে। ওইসব গ্রামে আমরা প্রথা ভাঙার চেষ্টা করব। অন্যদিকে, জেলার জেলাশাসক রেনু জয়পাল বলেন, বর পক্ষে থেকে আমাদের কাছে নিরাপত্তা দেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই কাজ করেছে প্রশাসন।
আপনার মতামত লিখুন :