বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ দেশের করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। ক্রমশ কমছে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিন একটু একটু করে আক্রান্তের সংখ্যা কমার সঙ্গে সঙ্গে কমছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যাও। পাশাপাশি নিম্নমুখী পজিটিভিটি রেটও। লকডাউন, কড়া বিধিনিষেধ, টিকাকরণে জোরের মধ্যে দিয়ে আবার ধীরে ধীরে সুস্থতার পথে ভারত। যদিও এই মুহূর্তে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হাজারের অনেক নিচেই রয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে অ্যাকটিভ রোগীর সংখ্যাও। এদিকে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ফের নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে করোনা মহামারী। নতুন শক্তিতে বলীয়ান হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে করোনার একাধিক নয়া প্রজাতি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে, দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় দু’বছর বাদে দেশের সমস্ত করোনা বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। ইতিমধ্যেই উঠে গেছে দেশে করোনা সংক্রান্ত সব বিধিনিষেধ। দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত দুইদিন, দেশের করোনা গ্রাফ বড় স্বস্তি দিচ্ছিল। ১০০০-এর নিচে নেমেছিল করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এরপর করোনার আরও এক নয়া প্রজাতি XE ভ্যারিয়েন্টের হদিশ মেলার খবরের মাঝেই ফের দেশে সামান্য বাড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সোম ও মঙ্গলবার সপ্তাহের শুরুতে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হাজারের অনেকটা নিচে নামলেও, বুধবার দেশে ফের বাড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমার পাশাপাশি গত ২৪ ঘণ্টায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা অবশ্যই স্বস্তির খবর। যদিও গত ২৪ ঘণ্টায় বেড়েছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ফের কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭ জন। গতকালের তুলনায় কমেছে আক্রান্তের সংখ্যা। গতকাল দেশের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১ জন। গতকাল দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছিল ২৬ জনের। দেশে এখনও পর্যন্ত কোভিডে মৃত্যু হয়েছে ৫ লক্ষ ২১ হাজার ৭৩৭ জন।
এতদিন সরকারকে সবচেয়ে স্বস্তি দিচ্ছিল যেটা, সেটা হল অ্যাকটিভ কেস। পরপর বেশ কিছু সময় ধরেই কমছিল দেশের চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর সংখ্যা। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টাত বাড়ল অ্যাকটিভ কেস। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ১১ হাজার ৫৮ জন। গতকাল দেশে মোট সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৮৭০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১৮৮ জন। আপাতত অ্যাকটিভ কেসের হার কমে দাঁড়িয়েছে ০.০৩ শতাংশে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ৮১৮ জন। এখনও পর্যন্ত দেশে করোনাকে পরাস্ত করে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ৪ কোটি ২৫ লক্ষ ৬ হাজার ২২৮ জন।
করোনার মোকাবিলায় এখনও চলছে টিকাকরণ। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য জানাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত দেশে ১৮৬ কোটি ২২ লক্ষ ৭৬ হাজার ৩০৪ জনের করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকাকরণের পাশাপাশি আগের মতোই চলছে টেস্টিংও। ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের টিকা দেওয়ার কাজ চলছে পাশাপাশি চলছে দেশের প্রবীণ নাগরিকদের বুস্টার ডোজ দেওয়ার কাজও। দেশজুড়ে শুরু হয়েছে ১২-১৪ বছর বয়সিদের টিকাকরণ কর্মসূচি। ষাটোর্ধ্বদের জন্য ‘প্রিকশন ডোজ’ অর্থাৎ বুস্টার ডোজে ছাড়পত্র দিয়েছে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। উল্লেখ্য, এরই মধ্যে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সিদের জন্য জরুরিকালীন ব্যবহারের ক্ষেত্রে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে নোভোভ্যাক্সকে। করোনার গ্রাফ বলছে ধীরে ধরে সুস্থতার পথেই এগোচ্ছে দেশ।
দেশ থেকে এখনও করোনা সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি। এদিকে, বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে নতুন করে করোনা সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত লক্ষ করা গেছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চিন। তাই এই পরিস্থিতিতে আগে থেকেই সতর্ক হচ্ছে দেশ। টিকাকরণের জোর দিয়েই করোনার মোকাবিলা করতে চাইছে দেশ। এদিকে, ICMR অবশ্য বলছে যে, এতে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। যদিও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে, এখনও ICMR সমস্ত করোনাবিধি মেনে চলার উপরই গুরুত্ব আরোপ করছে। ইতিমধ্যেই উঠে গেছে সব করোনা বিধিনিষেধ। যদিও মাস্ক পরা এবং সামাজিক দুরত্ববিধি মানা বাধ্যতামূলকই থাকছে। দেশে এই মুহূর্তে করোনার গ্রাফ নিম্নমুখী। এদিকে, জুনে করোনার চতুর্থ ঢেউ আছড়ে পড়ার ইঙ্গিত রয়েছে। তবে, তার আগে এই মুহূর্তে দেশে মহামারির দাপট যেভাবে কমে আসছে, তাতে স্বস্তি মিলেছে। এদিকে, ১০ এপ্রিল থেকে দেশে শুরু হয়েছে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য করোনার প্রিকশন ডোজ বা বুস্টার ডোজ। বেসরকারি হাসপাতাল বা বেসরকারি টিকাকরণ কেন্দ্র থেকে টাকা খরচ করে এই প্রিকশন ডোজ নিতে পারবেন প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক। এমনটাই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
জানা গিয়েছে, এই বুস্টার ডোজের ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের সময় যে টিকা নিয়েছিলেন, সেই টিকারই বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। অর্থাৎ কেউ যদি কোভিশিল্ডের প্রথম ও দ্বিতীয় নিয়ে থাকেন, তাহলে তিনি সেরাম ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়ার করোনা টিকাই পাবেন।
কারা পাবেন এই বুস্টার ডোজ? এবার সেটা জেনে নেওয়া যাক। যারা করোনা টিকার দুটি ডোজ নিয়েছেন এবং দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর ৯ মাস কেটে গিয়েছে, তাঁরাই এই ‘প্রিকশন ডোজ’ বা ‘বুস্টার ডোজ’ নিতে পারবেন। কতো খরচ পড়বে এই বুস্টার ডোজ নিতে? সার্ভিস চার্জ- এর জন্য বেসরকারি টিকাকেন্দ্রগুলি সর্বাধিক ১৫০ টাকা নিতে পারবে। অর্থাৎ টিকার প্রতিটি ডোজের যা দাম, তার থেকে সর্বাধিক ১৫০ টাকা বেশি নিতে পারবে বেসরকারি টিকা কেন্দ্রগুলি।
আপনার মতামত লিখুন :