বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ এখনও দলের সভাপতি নির্বাচন হয়নি। এদিকে তার আগেই বড় ধাক্কা কংগ্রেসে। দলের সব পদ থেকে ইস্তফা দিলেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ। শুধুমাত্র যে সব পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তাই নয়, কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করার আগে কংগ্রেস নেতা তথা সাংসদ রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ এসেছেন আজাদ।
বর্ষীয়ান এই কংগ্রেস নেতা দাবি করেছেন যে, রাহুল সহ-সভাপতি হওয়ার পর দলের গঠনতন্ত্র ভেঙে গিয়েছে। যে সিনিয়র নেতাদের পরামর্শে ইউপিএ সরকার সফল হয়েছিল, সেই সিনিয়রদের উপেক্ষা করেছেন রাহুল গান্ধী। নিজের ইস্তফা পত্রে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন গুলাম নবি আজাদ। গুলাম নবি আজাদের মতে, দেশে কংগ্রেসের বর্তমান অবস্থার জন্য কংগ্রেসই প্রধানত দায়ী।
সোনিয়া গান্ধীকে লেখা চিঠিতে গুলাম নবি আজাদ দাবি করেছেন যে, ‘২০১৩ সালে রাহুল গান্ধী দলের সহ- সভাপতি হওয়ার পরই সব সিনিয়রদের কোণঠাসা করা হয়েছে। সিনিয়রদের পরিবর্তে দলে অনভিজ্ঞ ধান্দাবাজরা দল চালাচ্ছেন।’ এখানেই শেষ নয়, বর্ষীয়ান এই কংগ্রেস নেতা তাঁর পদত্যাগ পত্রে দাবি করেছেন যে, ২০১৪ সালে কংগ্রেসের হারের সবথেকে বড় কারণ, রাহুল গান্ধীর অপরিণতমনস্কতা এবং ছেলেমানুষি। যেভাবে রাহুল গান্ধী কেন্দ্রীয় সরকারের পাশ করানো একটি অর্ডিন্যান্স প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলেছিলেন, তাতেই নির্বাচনে প্রচারের জন্য বড় অস্ত্র পেয়েছিল বিরোধীরা।
সোনিয়াকে লেখা চিঠিতে আজাদ আরও দাবি করেছেন যে, ‘২০১৪ সালের পর ৪৯টি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে ৩৯টি হেরেছে। এর মধ্যে কংগ্রেস নিজের দমে মাত্র ৪টি রাজ্যের বিধানসভা ভোটে জিতেছে। আর ৬ বার জোটসঙ্গীদের সঙ্গে ক্ষমতায় এসেছে। দুঃখজনকভাবে আজ কংগ্রেস মাত্র দুটি রাজ্যে ক্ষমতায়। আর দুটি রাজ্যে শাসক জোটের প্রান্তিক শক্তি।’
তিনি বলেছেন, ‘২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর দলের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। এর মধ্যে রাহুল দলকে বিপদে ফেলে ইস্তফা দিলেন। তার আগেই অবশ্য দলের সেইসব সিনিয়র নেতাদের তিনি অপমান করে ফেলেছেন, যারা নিজেদের জীবন দিয়ে দিয়েছেন দলের হয়ে।’
অন্যদিকে, জি-২৩ নেতাদের রাহুল পন্থীরা যেভাবে আক্রমণ করেছেন, সেটা নিয়েও সরব হয়েছেন আজাদ। পাঁচ পাতার চিঠিতে আজ়াদ শেষে স্পষ্ট ভাষায় লিখেছেন, ‘নেতৃত্বের দোষে কংগ্রেস এমনভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, যে এখান থেকে আর ফেরা সম্ভব নয়। ঠিক যে মডেলে ইউপিএ-২ সরকার ভেঙে পড়েছিল, দলের অন্দরেও এখন সেই পদ্ধতি চলছে। রাহুল গান্ধীর নিরাপত্তারক্ষী এবং আপ্তসহায়ক দল চালাচ্ছে।’ তিনি বলছেন, ‘এখন আমাদের এমন অবস্থা যে দল চালানোর জন্য প্রক্সি খুঁজতে হচ্ছে। এই প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হবে। কারণ ৮ বছরে নেতৃত্বের অপদার্থতায় কংগ্রেস এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, যেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।’
আজাদের ইস্তফা এবং এই বিস্ফোরক চিঠি কংগ্রেসকে যে অস্বস্তিতে ফেলবে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। পাশাপাশি আগামীতে আজাদের এই চিঠি জাতীয় রাজনীতিতে চর্চার বিষয় হতে চলেছে। আসলে বর্ষীয়ান এই কংগ্রেস নেতা দীর্ঘদিন ধরেই কোণঠাসা ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গুলাম নবি আজ়াদ ছিলেন কংগ্রেসের বিদ্রোহী জি-২৩ গোষ্ঠীর সবথেকে পরিচিত মুখ। এই গোষ্ঠীর ২৩ জন নেতা ২০২০ সালে সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি দিয়ে ‘সম্পূর্ণ সাংগঠনিক সংশোধন’ এবং একটি ‘পূর্ণ-সময়ের এবং দৃশ্যমান’ নেতৃত্বের দাবি জানিয়েছিলেন। ব্লক স্তর থেকে এআইসিসি পর্যন্ত নির্বাচনের ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্বাচন আজও করা হয়নি। এদিকে, অনেক দিন ধরেই ইস্তফা দেওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন তিনি। দলের অন্দরে থেকে যে অভিযোগগুলি প্রকাশ করতে পারছিলেন না, ইস্তফা দেওয়ার পর সেগুলিই বলে দিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :