বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ বেশ কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি ঘোরাফেরা করছে। ছবিটি খুবই অস্বস্তিকর। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কয়েকজন পুরুষ থানার ভিতরে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁদের পরনে পোশাক নেই। সবাইকেই অর্ধনগ্ন করে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু কেন? কেন এমন অস্বস্তিকর শাস্তি দেওয়া হয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তরের সন্ধান করতে গিয়েই সামনে বেরিয়ে এল আসল সত্য। এই ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের একটি থানায়। থানাতেই এই ছবি তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ।
জানা গিয়েছে, যাদের অভাবে অর্ধনগ্ন করে দাঁড় করিয়ে ছবি তোলা হয়েছে, তাঁরা একজনের গ্রেফতারির প্রতিবাদে বিক্ষোভ চালাচ্ছিলেন। এই ৮ জন পুরুষের মধ্যে আবার একজন সাংবাদিকও রয়েছেন। এদিকে, এই ছবি ভাইরাল হওয়ায় অস্বস্তিতে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ। এই ঘটনার জেরে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি চলতি মাসের ২ তারিখের ঘটনা বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই বৃহস্পতিবার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ প্রশাসন। জানা গিয়েছে, মধ্যপ্রদেশের সিধি জেলার কোতোয়ালি থানায় এই ঘটনা ঘটে। থানার এক পুলিশ কর্মীই আটজনের ওই অবস্থার ছবি তোলেন।
এদিকে, এই ঘটনা প্রসঙ্গে সিধি জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত করবেন এসডিপিও গায়ত্রী তিওয়ারি। আর তদন্তে সে সব পুলিশ কর্মী এবং আধিকারিকের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। তিনি জানিয়েছেন যে, অপরাধ যাই হোক না কেন, এই ধরনের পদক্ষেপ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এদিকে, এই ঘটনা সামনে আসতেই মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, বিজেপি বিধায়ক কেদারনাথ শুক্লা নীরজ কুন্দর নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ করেছেন। জানা গিয়েছে, ভুয়ো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে তাঁকে ও তাঁর ছেলের সম্পর্কে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে মন্তব্য করা হচ্ছে তাতে। এমন অভিযোগ করেছেন বিজেপি বিধায়ক। আর এর সঙ্গে জড়িত নীরজ কুন্দর। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই নীরজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একাধিক অভিযোগ দায়ের হয় তাঁর বিরুদ্ধে। এরই প্রতিবাদে থানার কাছে হাজির হয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন কয়েকজন। তাঁদের সকলকেই সঙ্গে সঙ্গে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেখানেই তাঁদের সঙ্গে ওই ঘটনা ঘটে।
যাদের ধরে থানায় নেওয়া হয়, তাঁদের মধ্যে একজন সাংবাদিকও ছিলেন। জানা গিয়েছে, ইউটিউব সাংবাদিক কনিষ্ক তিওয়ারি ছিলেন ওই আটজনের মধ্যে। তাঁর দাবি, বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে খবর করার জন্য তাঁকে হুঁশিয়ারি দেয় পুলিশ। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, কনিষ্ক তিওয়ারি জানিয়েছেন, পুলিশ ১৮ ঘণ্টা এভাবে নিজেদের হেফাজতে রেখেছিল তাঁদের। ২ এপ্রিল রাত ৮ টায় তাঁদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এখানেই শেষ নয়, তাঁর আরও অভিযোগ, এক পুলিশ কর্মীই তাঁদের ছবি তোলেন এবং সেই ছবি পড়ে প্রকাশ্যে আনা হয়। সঙ্গে তাঁদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছিল, খবর চালানো হলে, নগ্ন করে গোটা শহর ঘোরানো হবে। এদিকে, ওই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
এদিকে, এই ঘটনায় প্রতিবাদে সরব হয়েছেন অনেকেই। আইন রক্ষকদের এই আচরণে বিভিন্ন মহল থেকে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। প্রতিবাদে সরব হয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি টুইট করে প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, ‘এটাই আচ্ছে দিনের নমুনা। নরেন্দ্র মোদির জমানায় দমনপীড়নই নিয়ম হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলেই নেমে আসছে নির্মম অত্যাচার। রাষ্ট্রশক্তির এভাবে অপব্যবহার হচ্ছে। লজ্জাজনক!’
আপনার মতামত লিখুন :