শিক্ষার কোনও বয়স নেই। অদম্য ইচ্ছা ও মানসিক দৃঢ়তা থাকলে যে কোনও বাধা-বিপত্তি জয় করেই শিক্ষালাভ সম্ভব। বয়স কখনই পড়াশোনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। সে কথাই ফের সত্যি করে দেখালেন এক `মা`! একসময় মাধ্যমিক দিয়েও পাশ করতে পারেননি। এরপর বারংবার চেষ্টা করলেও একাধিক বাধা এসে দাঁড়িয়েছিল সামনে। শেষ পর্যন্ত ছাড়তে হয় পড়শোনা। অবশেষে আঠাশ বছর পর ৫৩ বছর বয়সে এসে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হলেন ওই মহিলা।
ত্রিপুরার আগরতলার মিলি পাড়ার বাসিন্দা শিলারাণী দাস। এই বছরই দুই মেয়ের সঙ্গে বোর্ডের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। মা মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেছেন আর দুই মেয়ে পাশ করেছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। বুধবারই প্রকাশিত হয় ত্রিপুরা বোর্ডের মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল। তারপরই দেখা যায় নিজেদের পরীক্ষায় তিনজনই ভালোভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এর চেয়ে খুশির খবর আর কি-ই বা হতে পারে!
জানা যায়, ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিলেন শিলারাণী। যখন তিনি আগরতলা পৌরসভায় (এখন কর্পোরেশন) একজন কেরানি কাজও করতেন৷ তবে সেবার চেষ্টা করেও মাধ্যমিকে পাশ করতে ব্যর্থ হন তিনি। এরপর যতবারই পরীক্ষা দেওয়ার বা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করেছেন ততবারই কোনও না কোনও বাধা চলে আসে।
শিলারাণী জানান, প্রথম প্রচেষ্টার চার বছর পর ফের বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই বছরই তাঁর বাবা মারা যান। ২০১১ সালে, তিনি আবার পরীক্ষার জন্য আবেদনপত্র পূরণ করেন। কিন্তু পরের বছরের শুরুতেই তাঁর স্বামী মারা যান। ফলে দুই মেয়েকে নিয়ে অথই জলে পড়েন তিনি। পরিবারের সমস্ত ভার এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। ফলে লেখাপড়া ছেলে মেয়েদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েই দিন কাটতে থাকে তাঁর।
তবে মনের ইচ্ছে কিন্তু একেবারেই দমেনি! তাই নিজের মেয়েদের উৎসাহে ফের এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেন তিনি। একেবারে উত্তীর্ণও হন৷ তবে এই জন্য পুরো কৃতিত্ব নিজের বড় মেয়ে রাজশ্রী দাসকে দিয়েছেন শিলারাণী। কারণ সে উৎসাহিত না করলে এই সাফল্য আসত না। রাজশ্রী নিজেও ২০১৫ সালে নিজের পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন। পরে ২০২০ সালে ছোটবোন জয়শ্রীর সঙ্গে মাধ্যমিক পাশ করেন। তারপর থেকেই দু`জনে একসঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার জন্য তৈরি হতে থাকেন। পাশাপাশি মা`কেও মাধ্যমিক দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে থাকেন।
অবশেষে এই বছর জয়শ্রী ৬৫.৬ শতাংশ এবং রাজশ্রী ৫০ শতাংশ নম্বর নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। আর তাঁদের মা ৪৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন। বর্তমানে আগরতলা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে কর্মরতা শিলারাণী। এত বড় সাফল্যের পর তাঁর খোলা স্বীকারোক্তি, "আমি পড়াশনার দিকে খুব বেশি সময় দিতে পারতাম না। তারপরেও যে আমি ভালোভাবে পাশ করেছি সেটাই আমার কাছে বড় প্রাপ্তি। তবে আমার মা যদি এটা দেখে যেতে পারতেন আরও খুশি হতাম।" এদিকে মায়ের সাফল্যে গর্বিত দুই মেয়েও।
আপনার মতামত লিখুন :