রাত পোহালেই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। শ্রীলক্ষ্মী সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধির দেবী। তিনি চঞ্চলা। তাই তাঁকে অচঞ্চল রাখতে কোজাগরী পূর্ণিমা তিথিতে দেবীর আরাধনা করা হয়। এই দিন বাংলার ঘরে ঘরে হয় দেবীবন্দনা। কোথাও ঘটে পুজো হয় তো কোথাও আবার পটে। অধিকাংশ বাড়িতে আবার শ্রীলক্ষ্মীর মুর্তি এনেও পুজো করা হয়৷
শরৎকালের এই লক্ষ্মীপুজো কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো নামে খ্যাত। এই পুজোয় রাত জাগার নিয়ম রয়েছে। `কঃ` শব্দের অর্থ হল কে, আর `জাগর` শব্দের অর্থ হল জেগে আছে। অর্থাৎ `কে জেগে আছে`? মনে করা হয়, লক্ষ্মীপুজোর দিন রাত পর্যন্ত জাগলে সেই বাড়িতে লক্ষ্মীদেবী প্রবেশ করেন। এদিন রাতে দেবী স্বর্গ থেকে নেমে আসেন। যাঁরা তাঁকে রাত পর্যন্ত জেগে আরাধনা করেন, দেবী তাঁদের আশীর্বাদ করেন। আর মা লক্ষ্মীর আসার সময় যে বাড়ির গৃহস্থরা ঘুমিয়ে থাকেন, সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে যান দেবী।
কথিত রয়েছে, শ্রীলক্ষ্মীর আরাধনা করলে ঘরে ঘরে শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। উপচে পড়ে ধনসম্পদ। আসে সমৃদ্ধি। সৌভাগ্য, সৌন্দর্য, সম্পদ, সুখের দেবী লক্ষ্মীকে শরৎ পূর্ণিমার শুভ তিথিতে আরাধনা করা হয়। এবছর অর্থাৎ ২০২২ সালের কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো পড়েছে ৯ অক্টোবর, রবিবার। এবার একনজরে দেখে নেওয়া যাক কখন পড়ছে পুজোর তিথি এবং পুজোর যাবতীয় নিয়ম।
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর তিথি:
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর সময়কালে পূর্ণিমা শনিবার ৮ অক্টোবর ভোররাত ৩টে ২৯ মিনিট ৪২ সেকেন্ড থেকে পড়ছে। ৯ অক্টোবর রাত ২৫ মিনিট, ৫ সেকেন্ডে ছাড়ছে। বলা হয় এই শরৎ পূর্ণিমায় কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো সন্ধ্যার সময় করাই শুভ।
লক্ষ্মীপুজোর দিন কী কী করলে সংসারে আসবে সমৃদ্ধি? রইল পুজোর যাবতীয় নিয়ম:
১. পুজোর দিন মঙ্গলঘট পরিষ্কার জল দিয়ে ভরুন। এরপর ঘট লাল কাপড়ে মুড়ে, লাল সুতো দিয়ে বেঁধে রাখুন।
২. ঘটের উপর নারকেল রাখুন। এরপর ঘটের গায়ে স্বস্তিক চিহ্ন আঁকুন। এই চিহ্ন সমৃদ্ধির প্রতীক। ঘটের জলের মধ্যে রাখুন চাল ও মুদ্রা।
৩. বাড়ির সদর দরজার সামনে মায়ের পদ চিহ্ন আঁকুন। এটিকে শুভ মনে করা হয়।
৪. দেবীর মূর্তি বা পটের সামনে পাঁচটি কড়ি রেখে পুজো করুন। এরপর সেই কড়ি সযত্নে আলমারিতে তুলে রাখুন।
৬. লক্ষ্মী পুজোর দিন অবশ্যই লক্ষ্মীর পাঁচালী পড়া এবং মা লক্ষ্মী ১০৮ নাম স্মরণ করা আবশ্যক। এছাড়াও এই দিন লক্ষ্মী হিসেবে কল্পনা করে ছোট কোনও মেয়েকে তাঁর পছন্দের পাঁচরকম জিনিস উপহার দেওয়া শুভ।
৭. লক্ষ্মীপুজোর দিন গঙ্গাস্নানে পুণ্যলাভ হয়। এছাড়াও এদিন দান-ধ্যান করলে পুণ্যার্জন হয়।
৮. মা লক্ষ্মীর পুজোর সঙ্গে এদিন একসঙ্গে নারায়ণও পুজো করলে তা সংসারের পক্ষে শুভ।
৯. দেবীর চরণে এদিন সাদা রঙ ছাড়া লাল, হলুদ, গোলাপি রঙের ফুল অর্পণ করুন।
১০. সবশেষে, এদিন নিরামিষ খাবার খান। আমিষ পদ একেবারেই এড়িয়ে চলুন।
আপনার মতামত লিখুন :