আজ, ১৫ অগাস্ট। ভারতের ৭৬তম স্বাধীনতা দিবস। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন হয় আমাদের দেশ, ভারত। বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীর কঠিন লড়াইয়ের ঘাম-রক্তের বিনিময়েই মিলেছে আজকের এই স্বাধীনতা। তাঁদের আত্মত্যাগ, বলিদানেই আজ ভারত হয়ে উঠেছে বিশ্বের বৃহত্তম এক গণতন্ত্র। সেই উপলক্ষ্যে প্রতি বছর ১৫ অগাস্ট পালিত হয় ভারতের স্বাধীনতা দিবস। এদিন নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্মান জানানো হয় দেশ-মাতৃকাকে। স্মরণ করা হয় আত্মত্যাগী বীর বিপ্লবীদের।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক স্থান বাংলার বীরভূম। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট। কারণ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বীরভূমের মাটিতে এই দিনই গুলি চলেছিল এবং তা একবারই। এমনকি এই সময় কালে মেদিনীপুর ও বীরভূম ছাড়া অন্য কোথাও গুলি চলার মতো ঘটনা ঘটেনি। এমনই উল্লেখযোগ্য তথ্য তুলে ধরেছেন সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের ইতিহাসবিদ অধ্যাপক পার্থ শঙ্খ মজুমদার।
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট যেদিন বীরভূমের এই মাটিতে গুলি চলেছিল সেই দিন শহীদ হয়েছিলেন বোলপুরের বাসিন্দা তারাপদ গুঁই। এর পাশাপাশি আরও কয়েকজনের শহীদ হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে থাকলেও সরকারি রিপোর্ট থেকে নেপাল চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাম পাওয়া যায়। নেপাল চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন বর্ধমানের দাইহাটার বাসিন্দা।
তারাপদ গুঁই বোলপুরের কালিকাপুরের বাসিন্দা। তিনি ছিলেন একজন মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে গিয়ে তিনি মাত্র ২২ বছর বয়সে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। শহীদ তারাপদ গুঁইনের নাতি সুব্রত গুঁই জানিয়েছেন, ঘটনার দিন তার ঠাকুরদা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন চাল রপ্তানি রুখে দেওয়ার জন্য। ঐদিন বোলপুর রেল স্টেশনে শহীদ তারাপদ গুঁই আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি পোলের মধ্যে উঠে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছিলেন। ঠিক সেই সময়ই ব্রিটিশরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি করেন এবং তিনি শহীদ হন।
তিনি যখন প্রাণ বিসর্জন দেন সেই সময় তার স্ত্রী ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এই শহীদকে স্মরণ করে কালিকাপুরে একটি শহীদ বেদী তৈরি করা হয়েছে এবং তার বাড়ির সামনের রাস্তার নাম দেওয়া হয়েছে শহীদ তারাপদ গুঁই সরণি। তবে এর পাশাপাশি ওই দিন বোলপুর রেল স্টেশনে ব্রিটিশদের গুলিতে যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের স্মৃতিতে স্টেশন চত্বরেও একটি শহীদ বেদী তৈরি করা হয়েছে।
তবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে এইভাবে শহীদ হওয়া তারাপদ গুঁইনের পরিবারের সদস্যরা কোনরকম সরকারি স্বীকৃতি পাননি বলেই অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি তাদের সরকারি স্বীকৃতি পাওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে দাবি করেছেন অধ্যাপক পার্থ শঙ্খ মজুমদার।
আপনার মতামত লিখুন :