নববর্ষের আগে মূলত গ্রামবাংলায় উদযাপিত হয় গাজন উৎসব! মনে করা হয়ে থাকে `গাজন’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ‘গর্জন’ শব্দ থেকে। কারণ এই গাজন উৎসবে শিবের নামে সন্ন্যাসীরা জোরে জোরে ধ্বনি দেন। মহাদেবের নামে মুখরিত হয়ে ওঠে আশপাশ। আর সেই গর্জন থেকেই গাজন শব্দের উৎপত্তি!
বাংলায় নববর্ষের ঠিক আগে উদযাপিত হয় গাজন উৎসব। বাংলার লোকসংস্কৃতির অন্যতম অংশ গাজন। এই উৎসব মূলত শিব, নীল, মনসা ও ধর্মরাজের পূজাকেন্দ্রিক উৎসব। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় এই উৎসবের একাধিক নাম। যেমন মালদহে এই উৎসবের নাম গম্ভীরা, আবার জলপাইগুড়িতে নাম গমীরা। চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহ জুড়ে শিবের গাজন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
তবে এই উৎসবের একটি নির্ধারিত দিনও আছে। গতকাল অর্থাৎ ১২ই এপ্রিল গোটা রাজ্য জুড়ে পালিত হয়েছে গাজনের উৎসব। তবে এই পুজো অত্যন্ত কষ্টকরও বটে! নিজের শরীরকে যন্ত্রণা দিয়ে সন্ন্যাসী ও ভক্তরা মহাদেবের আরাধনা করে থাকেন। গাজন উৎসবে বিশাল শোভাযাত্রা বের হয়। সেই শোভাযাত্রা করে ভক্ত সন্ন্যাসীরা নিজের আরাধ্যের মন্দিরে যান। মূলত সমাজের পতিত ব্রাহ্মণরা গাজন উৎসবের আয়োজন করে থাকেন। গাজনের অনেক ধরনের বৈশিষ্ট্য আছে! যেমন এই পুজোয় জ্বলন্ত ছাইয়ের ওপর দিয়ে হাঁটা, কাঁটা, বঁটি, ছুরি বা অন্যান্য কোনও ধারালো কিছুর ওপর লাফানো, পিঠে আংটা ঝুলিয়ে ঝোলা ইত্যাদি কর্মকাণ্ড
দেখলে গা শিউরে ওঠে বৈকি!
গাজন উৎসবের পিছনে পৌরাণিক কাহিনীও রয়েছে।পৌরাণিক কাহিনি মতে মহাদেবের উপাসক বাণ রাজা শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে যুদ্ধে রীতিমতো ক্ষতবিক্ষত হয়ে মহাদেবকে সন্তুষ্ট করতে নিজের গায়ের রক্ত দিয়ে নৃত্যগীত পরিবেশন করেছিলেন। আর তারপর থেকেই শৈব সম্প্রদায়ের ভক্তগণ শিবের প্রতি নিজের আনুগত্যের জন্য নিজেদেরকে শারীরিকভাবে কষ্ট দিয়ে গাজন উৎসবের আয়ােজন করেন।
আপনার মতামত লিখুন :