শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

‘গরুচোরের মেয়ে, বলার মতো মুখ নেই’! আদালতে তীব্র কটাক্ষের মুখে কেষ্ট-কন্যা সুকন্যা

আত্রেয়ী সেন

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২২, ০৩:৩৫ পিএম | আপডেট: আগস্ট ১৮, ২০২২, ০৯:৫০ পিএম

‘গরুচোরের মেয়ে, বলার মতো মুখ নেই’! আদালতে তীব্র কটাক্ষের মুখে কেষ্ট-কন্যা সুকন্যা
‘গরুচোরের মেয়ে, বলার মতো মুখ নেই’! আদালতে তীব্র কটাক্ষের মুখে কেষ্ট-কন্যা সুকন্যা

বংনিউজ২৪x৭ ডিজিটাল ডেস্কঃ প্রাথমিকে বেআইনিভাবে নিয়োগের অভিযোগে অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল-সহ মোট ৬ জনকে তলব করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। ইতিমধ্যেই আদালতে গেছেন অনুব্রত কন্যা সুকন্যা মণ্ডল। বাবার কোপে মেয়েও শাস্তি পাচ্ছেন বলে একদিন আগেই মন্তব্য করেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। এবার আজ কলকাতা হাইকোর্টে পৌঁছতেই তীব্র কটাক্ষের মুখে পড়তে হল অনুব্রত কন্যা সুকন্যা মণ্ডলকে। আদালত চত্বরেই তাঁকে লক্ষ্য করে ‘গরুচোরের মেয়ে’ বলে কটাক্ষ করা হল। এদিন সুকন্যাকে আদালত চত্বরে দেখে ক্ষোভ উগরে দিলেন এক নাগরিক।

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো এদিন দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টে যান সুকন্যা মণ্ডল। তিনি আদালতে পৌঁছাতেই তাঁকে দেখে আদালতে ভিড় উপছে পড়ে। ওই ভিড়ের মধ্যে দিয়েই পুলিশি ঘেরাটোপে কোনওরকমে আদালতে ঢোকেন সুকন্যা মণ্ডল। সেই সময় তাঁকে দেখেই একের পর এক কটাক্ষ শুরু হয়।

গতকাল থেকেই প্রশ্ন উঠছে অনুব্রত কন্যা টেট উত্তীর্ণ কিনা। আজ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে সেই নথিই জমা দিতে আদালতে গিয়েছিলেন সুকন্যা মণ্ডল। সেখানেই তীব্র কটাক্ষের মুখে পড়তে হল তাঁকে। এদিন কলকাতার চিনার পার্কের বাড়ি থেকে আদালতে পৌঁছান সুকন্যা মণ্ডল। সেখানে তাঁকে ঘিরে ধরেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আদৌ তিনি টেট উত্তীর্ণ কিনা? কিন্তু তিনি কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি। নিজেই ভিড় কাটিয়ে আদালতে ঢুকে যান। আর তখনই তাঁকে দেখে করে কটাক্ষ করা হয়। সুকন্যা কিছু বলছেন না কেন প্রশ্ন করা হলে, পাশ থেকে এক মহিলা, জানা গিয়েছে, নাম মালতী মিত্র, তিনি বলেন, ‘কিছু বলতে পারবে না। বলার মতো মুখ নেই। কী করেছে জানেন না! জানেন না কী অন্যায় করেছে!’ সুকন্যা নীরবই ছিলেন এই কথা শোনার পর। তাঁর মুখে ছিল মাস্ক। এরপর ওই মহিলা বলেন, ‘মুখটা দেখান, একটা ছবি তুলি!’

এখানেই শেষ নয়, এরপর সরাসরি অনুব্রত মণ্ডলকে আক্রমণ করতে শুরু করেন ওই মহিলা। তিনি বলেন, ‘বাবা গরু চোর, তাঁর মেয়ে। এঁদের এত গার্ড করে নিয়ে যাচ্ছেন!’ সুকন্যা মণ্ডলকে তিনি কেন আক্রমণ করছেন তা জানতে চাওয়া হলে বলেন, ‘বাবার কুকীর্তি জানেন না! বাবা কী করেছে! একটা এইট পাস লোক। মাছের ব্যবসায়ী ছিল। কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। সমস্ত টাকার হিসেব দিতে পারবেন! আমরা গরিব মানুষ না খেয়ে মরছি।’

উল্লেখ্য, নিয়োগের দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করছেন টেট উত্তীর্ণরা। তাঁর পরিবারের কোনও সদস্যও কি পাস করে চাকরি পাননি! জানতে চাওয়া হয়, মালতীর কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়িক কেউ পরীক্ষা দেয়নি। তৈরি করব কী করে! তৈরি করব, আর তার পর রাস্তায় পড়ে থাকবে ছ’মাস, ন’মাস ধরে। কেউ বিচার করবে না! এদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। আমরা ন্যায় চাই।’

গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারির পরই, মেয়ে সুকন্যার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে অভিযোগ জানানো হয় যে, টেট পাশ না করেই চাকরি করছেন সুকন্যা মণ্ডল। তাঁর বিরুদ্ধে টেট পাশ না করেই চাকরি পাওয়ার অভিযোগের পাশাপাশি এও অভিযোগ আছে যে, তিনি নাকি স্কুলেও যান না। স্কুলে না গিয়েই প্রত্যেক মাসে বেতন পান। এছাড়াও বাড়িতে রেজিস্টার এনে সই করানোর মত গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। এইসব অভিযোগের ভিত্তিতেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছেন আইনজীবী ফিরদৌস শামিম। তার জন্যই আদালত সুকন্যা মণ্ডলকে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টে বুধবার আইনজীবী ফিরদৌস শামিম অতিরিক্ত হলফনামা জমা দিয়ে সুকন্যার চাকরির বিষয়টি আদালতে জানান। সেটা শুনেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আজ দুপুরে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছেন।

জানা গিয়েছে, বোলপুরের কালিকাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করেন সুকন্যা। ২০১৪ সালে তিনি চাকরিতে যোগ দেন। ফিরদৌস শামিমের দাবি করেছেন যে, তিনি কোনোদিন স্কুলে যাননি। তাঁদের বাড়িতেই হাজিরার খাতা পাঠানো হত। স্কুলে না যাওয়ার পরেও, প্রতি মাসে ঠিকমতো বেতন পেয়ে যেতেন। এই তথ্যের ভিত্তিতেই তিনি সুকন্যা-সহ আর ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এরা হলেন, অনুব্রতর ভাই সুমিত মণ্ডল, আপ্তসহায়ক অর্ক দত্ত, ভাইপো সাত্যকী মণ্ডল, তৃণমূল নেতা ঘনিষ্ঠ কস্তুরী চৌধুরী, সুজিত বাগদি।

আজ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেয়ে নথি-সহ আদালতে এসে পৌঁছান সুকন্যা। এদিন সুকন্যাকে কটাক্ষ করে মালতী নামের ওই মহিলা বলেন, ‘একশো বার বলব গরু চোর। মেয়ের নামে কোটি কোটি টাকা। সাধারণ মানুষের টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। জজসাহেবরা বোকা নন। আদালত আছে বলে বেঁচে রয়েছি আমরা।’